দেশে মৌসুমি ফলসহ খাদ্যদ্রব্য বিষমুক্ত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি বাগান থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত যারা ফরমালিন ও বিষযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনের ব্যবস্হ নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।শনিবার (৪ জুন) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানায় পরিবেশবাদী ১৫টি সংগঠন।
মানববন্ধনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, নিরাপদ খাদ্য আমাদের নাগরিক অধিকার। রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করছে না। আমরা নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছি না। বাজারে যে ফল বিক্রি হয় প্রতি পদে পদে সেখানে বিষ মেশানো হয়। আমরা দেখছি আমবাগান থেকেই বিষ মেশানো হয়। এগুলো পরিপক্ব হওয়ার আগেই বাজারে চলে এসেছে। এখন কাঁঠালের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তারা পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিচ্ছে না।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, মানুষকে হত্যা করলে যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাহলে বিষ খাইয়ে যারা মানুষকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলছে এর জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত।
একজন ব্যবসায়ী যদি আদর্শবান ও সৎ না হয় তাহলে এগুলো বন্ধ হবে না। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব সৎভাবে ব্যবসা করুন। আমরা আশা করব সরকার মানুষের সুস্থতার কথা চিন্তা করে বিষমুক্ত ফল যেন খেতে পারি সে ব্যবস্থা চালু করবেন।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ বলেন, যত ধরনের ফল ও খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত রয়েছে সব ধরনে মধ্যে ফরমালিন ব্যবহার করে আমাদেরকে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে। এতে আমাদের শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। ফলমূলে ফরমালিন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ফলে বিষ মেশানো শুরু হয় সেই বাগান থেকেই। সেখান থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা একসাথে সবাই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এটা বন্ধ করতে হবে। যে বাগানে বিষ মেশানো হয় সেই বাগানের ফল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে সংগঠনগুলো ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন :
১। উৎপাদন পর্যায় থেকে খাদ্য গ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে খাদ্যের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২। দেশের বর্তমান খাদ্যে বিষ বা ভেজালের সঠিক চিত্র নিরূপণে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে হবে।
৩। খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মেশানোর সঙ্গে জড়িত ও রাসায়নিক দ্রব্য যুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড প্রদানই যথেষ্ট নয়। এদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই আইনের ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
৪। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। আইনের আওতায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হলেও অদ্যাবধি কর্তৃপক্ষের বাস্তব কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আইনটি বাস্তবায়নে জরুরিভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৫। ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
৬। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
৭। ভেজালবিরোধী টিম কর্তৃক নিয়মিতভাবে খেজুরসহ অন্যান্য ফল, মুড়ি, সেমাই, রং মিশ্রিত সকল খাবার পরীক্ষা করা এবং সকল খাদ্য মজুদকারী গুদাম/কারখানা/মোকাম পরিদর্শন করা।
৮। পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা এবং এ কাজে এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১০। গণমাধ্যমে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিষয়ে সচেতন করা।
১১। সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা।
১২। খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি পরিদর্শন ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের সাধন।
১৩। স্টকহোম কনভেনশন স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোরের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষে জরুরিভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করা।
বিএনএনিউজ,আহা,জিএন, বি রহমান, হাসনা