28 C
আবহাওয়া
৭:৩২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরের অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে

সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরের অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

বিএনএ, রিপোর্ট : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের তলদেশের বিশাল সম্পদ কাজে লাগানোর অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির বিষয়টি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমুদ্রের রং নীল আর সে কারণেই সমুদ্রকেন্দ্রিক পরিচালিত অর্থনীতিকে বলা হয় ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি।

গত ২ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃক ‘ব্লু ইকোনমি: ফান্ডিং প্রসপেকটাস অব ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সুনীল অর্থনীতিকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ তুলে ধরেন। বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে সিঙ্গাপুর সব ক্ষেত্রে উন্নয়নকে সম্ভব করেছে তা ব্যাখ্যা করেন তিনি।

তিনি বৈজ্ঞানিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের গবেষণা করতে হবে কীভাবে সমুদ্রের সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব, কাজে লাগানো সম্ভব। সবকিছুর মধ্যেই সম্পদ রয়েছে, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে সম্পদের মাঝে থাকা সম্ভাবনাকে এবং সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।’ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানান তিনি।

বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অংশগ্রহণ করতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনাময় দেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূমির সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকা পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুনীল অর্থনীতির জন্য বেসরকারি খাত ও পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক অর্থায়ন সারা পৃথিবীতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাণিজ্যিকভাবে সফল করার মাধ্যমে আইডিয়াকে কাজে লাগানোর কথা বলেন তিনি। বাণিজ্যিকভাবে সফল করা গেলে শুধু সরকারের অর্থায়নের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে এবং বেসরকারি খাতে অর্থায়নের সুযোগ বহুগুণে বাড়বে বলে জানান তিনি। বড় ধরনের অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রজেক্টের জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হলে, বিএসইসি পরিবেশবান্ধব প্রজেক্টে অর্থায়নের সুযোগকে কাজে লাগাতে সর্বাত্মক সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।

সবাইকে ব্লু বন্ড, গ্রিন বন্ড নিয়ে ভাবার অনুরোধ জানান। সম্পদকে ব্যবহার করে জিডিপিতে অবদান রাখতে হবে, উন্নত দেশ হয়ে ওঠার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি। সামষ্টিক অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি সেমিনারে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশিদ ‘বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা প্রদান করেন।

তিনি প্রেজেন্টেশনে সুনীল অর্থনীতি, বিভিন্ন অর্থনীতিতে ব্লু-ইকোনমির অবদান, সুনীল অর্থনীতির বৈশ্বিক অবস্থা, বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির অর্থনৈতিক মূল্য, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো, বাংলাদেশে উপকূল এলাকা ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে সরকারের গৃহীত ‘জাতীয় পরিকল্পনা ও সুনীল অর্থনীতির কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম ও পদক্ষেপ: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুনীল অর্থনীতি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১-এ সুনীল অর্থনীতি পরিকল্পনা’ ইত্যাদি উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে ‘ব্লু ইকোনমি: ফান্ডিং প্রসপেকটাস অব ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুনীল অর্থনীতির নানা দিক তুলে ধরেন। বিশ্বজুড়ে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র এবং বাংলাদেশে তার সম্ভাবনাগুলো তথ্য-উপাত্তসহকারে উপস্থাপন করেন তিনি।

তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কীভাবে দেশের পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা সম্ভব তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ব্লু ইকোনমির জন্য বিশেষভাবে সৃষ্ট ব্লু বন্ড ধারণা নিয়ে আলোকপাত করেন। ব্লু বন্ড এর মাধ্যমে পৃথিবীর সেশেলস, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে ব্লু বন্ডের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহের উদাহরণ তুলে ধরেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে পরিবেশবান্ধব বন্ড বাজারের উন্নয়ন এবং দেশে এ-সংক্রান্ত গাইডলাইড তৈরি, বাস্তবায়ন ইত্যাদির জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও ইউএনডিপির চুক্তির কথা উল্লেখ করে দেশে পরিবেশবান্ধব বন্ডগুলোর বিকাশের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন সুনীল অর্থনীতির জন্য বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি অন্যান্যের মধ্যে বলেন, ‘অনেক দেশে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা যায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, কিন্তু বাংলাদেশে সরকারের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা রয়েছে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটানোর।’ সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ও অর্থায়নে এই ক্ষেত্রটিতে প্রাইভেট সেক্টরের অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং প্রাইভেট সেক্টরকে অন্তর্ভুক্তি না করতে পারলে শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে এই খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘কীভাবে প্রাইভেট সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। শুধু রপ্তানিকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের ব্লু ইকোনমির উৎপাদনকে আরও নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে।’ এ ছাড়াও তিনি বলেন, অনেক পক্ষ দেশের ব্লু ইকোনমির উন্নয়নে কাজ করছে এবং প্রায় ২০ টি মন্ত্রণালয় এখানে জড়িত রয়েছে। উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে সব পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। বাংলাদেশে পলিসি ও আইনগত কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়েছে এবং বর্তমানে পলিসি অনুযায়ী বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব বন্ডের জন্য গাইডলাইনগুলো তৈরিতে বিএসইসি আইএফসির সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

বিএনএ,এসজিএন/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ