বিএনএ ডেস্ক : ইসলামের প্রচার, প্রসার ও উন্নয়নে দেশব্যাপী যে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে সরকার, তার মধ্যে মুজিববর্ষেই ১৭০টি মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক নজিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটাই হচ্ছে বিশ্বে প্রথম কোনো সরকারের একই সময়ে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণের ঘটনা। ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও মূল্যবোধের প্রচার এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের ‘প্রকৃত মর্মবাণী’ প্রচার করার প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য।
দেশের কয়েকটি জেলা ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গায় এসব মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জেলা মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় সেখানে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এ সময় সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফারুক আহমেদ জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ১০টি মসজিদের মধ্যে জেলা মডেল মসজিদ ও একটি উপজেলা মসজিদ নির্মাণ কাজ আগামী মার্চের প্রথমেই শেষ হবে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, রংপুর জেলায় যেসব মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে তার কাজ ‘অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে’ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। ‘আশা করছি, দ্রুততম সময়ে এই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।’
সারা দেশে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক নজিবুর বলেন, আগামী এপ্রিলে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেপ্টেম্বরে ৬০টি এবং মুজিববর্ষের শেষ ভাগে ডিসেম্বর মাসে আরো ৬০টিসহ সর্বমোট ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।
এই প্রকল্পের মোট কাজের ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প নেয়া হয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে এসব মসজিদ।
৪০ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে এই মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।
বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফঁাকা থাকবে।
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন এসব মসজিদ নির্মাণে প্রতিটির বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সারা দেশে নির্মাণাধীন এসব মসজিদের ভৌত অবকাঠামো গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক নজিবুর রহমান।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে।
এসব মসজিদে সারা দেশে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। একসঙ্গে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন, ৬ হাজার ৮০০ জন ইসলামিক বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন, ৫৬ হাজার মানুষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারবেন এবং প্রতি বছর এখান থেকে ১৪ হাজার কোরআনে হাফেজ হবেন। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফঁাকা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ: মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন একাধিক ইমাম-মাওলানা। রংপুর জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাস্টার ট্রেইনার মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে শুধু মসজিদ নয়, বরং ইসলামী সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র নির্মাণ করে দিচ্ছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বলছেন, এটা তাদের জন্য বড় পাওয়া। এতে একদিকে যেমন ধর্মচর্চার সুযোগ হবে তেমনি ইসলামের বিভিন্ন বার্তাও জনগণের কাছে খুব সহজেই পৌঁছানো যাবে।’
রংপুরের গঙ্গাছড়া নিউ স্টার পাড়া জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণ করায় আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দোয়া করি তিনি যেন ধর্মীয় কাজগুলো বেশি বেশি করতে পারেন।’
নীলফামারী সদরের বায়তুল আমান জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মসজিদ সামাজিক অবক্ষয় ও অন্যায়-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’