22 C
আবহাওয়া
১:১৮ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » প্রধান উপদেষ্টা ও সেনা প্রধানের মতবিরোধ!

প্রধান উপদেষ্টা ও সেনা প্রধানের মতবিরোধ!


ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়। পতন হয় সাড়ে ১৫ বছরের সাম্রাজ্যের। এর তিনদিন পর গত ৮ই আগষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ শাসনের দায়িত্ব নেন। গণবিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের মেয়াদ ও সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে শুরু থেকেই ধোয়াঁশা রয়েছে। কতদিন এই সরকার ক্ষমতা চর্চা করবেন সে বিষয়টি কারো কাছে পরিস্কার নয়। দেশের এই মূহুর্তের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসলেও জামায়াত ইসলামী বিএনপির এই দাবির বিরোধীতা করে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে লম্বা সময় দিতে চায়।

YouTube player

 

ক্ষমতা হস্তান্তর ও নির্বাচন নিয়ে দুই দলের এই পরস্পর বিপরীত মূখী অবস্থানকালে সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অর্ন্তবতীকালীন সরকারের প্রতি তার বাহিনীর সম্পূর্ন আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হওয়া উচিত। অর্থাৎ ২০২৬ সাল নাগাদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর এটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিলো। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার কিংবা সরকার সংশ্লিষ্ট কারও দিক থেকে নির্বাচনের সময়সীমা উল্লেখ করে এটিই ছিলো প্রথম কোন বক্তব্য।

সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর সবাই ধরে নিয়েছিলেন সেনা প্রধানের বক্তব্যের মাধ্যমে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন সংক্রান্ত মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য নয়। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো মত দেয়নি। তার ভাষায় ‘এটি আমাদেরকেই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন তখন সেটাই হবে তারিখ’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে মতবিরোধ বা ‘ঐক্যমতের অভাব’ রয়েছে ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, একটি রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পর যারা দেশ চালাচ্ছেন তারা আগে কখনো একসাথে কাজ করেননি। ফলে তাদের মধ্যে ভিন্ন চিন্তা হতে পারে। নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়গুলোতে আলাদা আলাদা বক্তব্য আসায় সমন্বয়হীনতার বিষয়টি উঠে আসছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকার ও সেনাপ্রধানের দিক থেকে যেসব বক্তব্য আসছে সেটিকে ঠিক সমন্বয়হীনতা বলা যাবে না, আবার সমন্বয় আছে সেটাও তো বলা যাবে না’।

রয়র্টাসকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে সেনা প্রধান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে ‘অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক’ বিদ্যমান। দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টায় সামরিক বাহিনী সমর্থন দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই একযোগে কাজ করলে ব্যর্থ হবার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন ওয়াকার-উজ-জামান।

ওই সাক্ষাতকারে তিনি এও বলেছিলেন ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন’ তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। সেনা প্রধানের ভাষায় “আমি তার পাশে থাকবো। যা-ই হোক না কেন। যাতে করে তিনি তার কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারেন,”।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। তবে সে সময়টা নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ঘোষিত ও গৃহীত রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করার ওপর।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই ৭ আগস্ট দলটি সমাবেশ করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানালেও পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপি মহাসচিব সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেবে।

এই অবস্থায় গত ১৫ই সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে টিআইবি আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন ‘নতুন বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য।’

১৬ ই সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার-সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের ইন্ধনের সমালোচনা করে বলেছেন ‘সমাজের গুরুত্বপূর্ণ লোক বিভ্রান্তমূলক কথা বলছেন। এ সরকার যাদের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে বলছেন নতুন দল করতে হবে। আমাদের বিস্ময় লাগে নতুন দল গঠনের দায়িত্ব তাদের কে দিয়েছে?’
বিএনপি মহাসচিবের কথায় এটা স্পষ্ট যে, তারা মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছে এবং দেশে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তির অভ্যুদয়ে ইন্ধন জোগাচ্ছে।

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘বাংলাদেশ নাগরিক শক্তি’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এ সংগঠনটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির আত্মপ্রকাশে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা পালন করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। বিএনপি আশঙ্কা করছে, ইউনূস সরকার নির্বাচনে সেই নতুন দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, যা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে!

সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ