বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহর পদত্যাগ দাবিতে ওয়াসা ভবন ঘেরাও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি চলছে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এ সময় আন্দোলনকারীদের ওয়াসার এমডির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। গত তিন দিন ধরে এমডির পদত্যাগ দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।
রবিবার দুপুরেও চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির পদত্যাগসহ ১৭ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়ে বলছেন, আমি নাকি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে আপনজনদের চাকরি দিয়েছি। তাদের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকল্প থেকে আমার এক টাকাও নেওয়ার সুযোগ নেই। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রাম ওয়াসার এক জরাজীর্ণ অবস্থায় আমি ২০০০ সালে দায়িত্ব নিয়েছি। তখন চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদনক্ষমতা ছিল মাত্র ১২ কোটি লিটার পানি। বর্তমানে তা ৫৬ কোটি লিটারে উন্নীত করা হয়েছে।’
নুরুল ইসলাম নামে চট্টগ্রাম ওয়াসার এক অস্থায়ী কর্মচারী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত ১৫ বছরে ওয়াসায় কমপক্ষে ৩০০ জন অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে রাজস্ব খাতে স্থায়ী করা হয়নি। আমাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য এমডির কাছে দাবি করেছি।’
আবদুল মহিন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার সব নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজনরাই নিয়োগ পেয়েছে। যে ৩০০ অস্থায়ী শ্রমিক আছে তাদের বাদ দিতে হবে। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেধাবীদের নিতে হবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম আছে। তিনি কোনও প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ করতে পারেননি। প্রত্যেক প্রকল্পে সময় ও ব্যয় বেড়েছে। এসব হয়েছে দুর্নীতির কারণে। আমরা তার পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেননি। এ জন্য চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকরা তার পদত্যাগের দাবিতে ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছে। লাগাতার এ আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে, সোমবার চার দফা দাবি আদায়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহকে আলটিমেটাম দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী দল। ওয়াসা ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।আন্দোলনকারীরা চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবনের এমডির কক্ষে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওয়াসার কিছু অস্থায়ী কর্মচারী তাদের বাঁধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বিএনএনিউজ / রেহানা/হাসনা