20 C
আবহাওয়া
৬:০৯ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ‘রিয়েল হিরো’ মানজুর আল মতিনের ‘রিয়েল’ পরিচয় কী?

‘রিয়েল হিরো’ মানজুর আল মতিনের ‘রিয়েল’ পরিচয় কী?

‘রিয়েল হিরো’ মানজুর আল মতিনের ‘রিয়েল’ পরিচয় কী?

বিএনএ, ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট করে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন। এরই মধ্যে দেশজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীরা মানজুর আল মতিনের ছবি শেয়ার করে তাকে ‘রিয়েল হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কিন্তু অনুসন্ধানে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। যেসব পেইজ থেকে আইনজীবী মানজুর আল মতিনকে ‘রিয়েল হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সেসব পেইজ ইসলামী ছাত্র শিবির কিংবা তাদের আধুনিক সংস্করণ গণ অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসা ছাত্র শক্তির নেতাকর্মী বা সমর্থকরা পরিচালনা করেন। যা আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের মানুষ জানেন না।

YouTube player

মানজুর আল মতিন জন্মগতভাবে একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আর তা হচ্ছে একাত্তরের বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থানকারি জামায়াত ইসলামী। সে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বর্তমান সময়ের রিয়েল হিরো’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন গ্রুপ ও আইডি থেকে পরিকল্পিতভাবে আইনজীবী মানজুর আল মতিনকে ভাইরাল করা হয়। শুধু রিট করে নয়- আন্দোলনে সোচ্চার ও শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত লেখালেখিও করেন তিনি। জামায়াত-শিবিরপন্থিরা তার পোস্ট ব্যাপকভাবে শেয়ার করে ‘দেশের প্রয়োজনে সংবাদ উপস্থাপক থেকে আইনজীবী’ রূপে তার আবির্ভাবের গল্প তুলে ধরছেন। কেউ বা ছায়াছবির নানা চরিত্রজুড়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ত্রাণকর্তা হিসেবে তুলনা করছেন এই আইনজীবীকে।

অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবী মানজুর আল মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখনও তিনি জামায়াত- শিবিরের স্বার্থ রক্ষা করেন। রিট শুনানি শেষে এক সাংবাদিক মানজুরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি কি শিবির করেন? তিনি বলেছেন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না! তাহলে মতিন কি আসলেই নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন? নাকি সত্য আড়াল করতে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশের রাজনীতির একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের তিন জোটের রূপ রেখা অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে, বিএনপি ৩০.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৪০ আসন পায় অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ৩০.০৮ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় মাত্র ৮৮টি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৫ ও জামায়াত ইসলামী ১৮ আসন পায়। ফলে কোনো দলই একক সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তখন জামায়াত ইসলামীর ১৮ জন সংসদ সদস্যের সমর্থনে বিএনপি সরকার গঠন করে। পরবর্তীতে ২টি সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ জামায়াত ইসলামীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ২০-এ। যে দুইজন মহিলা সংসদ সদস্য হয়েছেন তারা হলেন- বেগম হাফেজা আসমা খাতুন ও বেগম খন্দকার রাশিদা খাতুন।

কথিত ‘রিয়েল হিরো’ আইনজীবী মানজুর আল মতিনের মায়ের মা অর্থ্যাৎ নানী হাফেজা আসমা খাতুন ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর মহিলা শাখার নেত্রী যিনি ১৯৯১ সালে জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় ইসলামী ছাত্রী সংস্থা।

হাফেজা আসমা খাতুন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা থাকাকালীন শিবিরের ছাত্রীসংস্থার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। শিবিরের মূল ধারার রাজনীতির উপর তার একাধিক বই রয়েছে। এছাড়াও মাসিক ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রবন্ধ ও কলাম লিখতেন।

মানজুর আল মতিনের আপন মামা সাইফুল্লাহ মনসুর যুদ্ধাপরাধী নিজামীর জামাতা। তার আপন খালা মুন্নি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বড় ছেলে মামুন আল আযমীর স্ত্রী।

মানজুর আল মতিনের বাবা সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন আদালত প্রাঙ্গণে জামায়াতপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জামায়াত ইসলামীর কোটা থেকে তিনি হাইকোর্টে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন। তার বাবা বিচারপতি আব্দুল মতিন আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। সে সময় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানিতে ‘বিব্রত’ বোধ করে আলোচনায় আসেন মানজুর আল মতিনের বাবা বিচারপতি আব্দুল মতিন। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন।

মানজুর আল মতিনের পরিবার ও স্বজনরা জামায়াতের সঙ্গে আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে তিনি জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরপরই ছাত্রদের আন্দোলনে গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। আর এই মামলায় তার পক্ষে যা লড়ছেন তারা সবাই জামায়াত বিএনপি ঘরোনার আইনজীবী হিসাবে পরিচিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তালিকাভুক্ত আইনজীবী। ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসএসি ও এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়েছেন। প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রয়াত মাহমুদুল ইসলামের সাহচর্যে তার আইন পেশায় হাতেখড়ি। বর্তমানে প্রখ্যাত দেওয়ানি আইন ও রিট বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগীর জুনিয়র হিসেবে কাজ করছেন। আইনপেশা পরিচালনার পাশাপাশি মানজুর আল মতিন বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে’ সংবাদ পাঠ করার পাশাপাশি টকশো উপস্থাপনা করেন। তার স্ত্রী পেশায় চিকিৎসক। তিনি ১২ বছরের বয়সি এক সন্তানের জনক।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ