বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫২
২৪ নভেম্বর, ১৯৭১
…..গত রাতে বিবিসি’র এক বিশেষ বুলেটিনে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিকদের পাঠানো রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় : মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে গত ৪৮ ঘন্টায় পাকিস্তান তার দশটি সামরিক ঘাঁটি হারিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা পশ্চিম খণ্ডে মোট বাইশটি সীমান্ত চৌকির মধ্যে একুশটি দখল করেছে।
গত রাতে ঢাকা থেকে বিবিসি’র বিশেষ সংবাদদাতা মি: রোনাল্ড রোবসন জানাচ্ছেন : মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা এখন যশোরের চৌগাছা থেকে যশোর বিমান বন্দরের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অধিকৃত যশোর বিমানবন্দরে রানওয়ে ও কন্ট্রোল টাওয়ারটি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে করতে পাকিস্তানী বাহিনী এখন দ্রুত পিছু হটে যেতে শুরু করেছে।
বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও অস্ট্রেলীয় বেতার থেকে প্রচারিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় : বাংলাদেশের সর্বত্রই বীর মুক্তিসেনারা সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে শত্রুসেনাদের একের পর এক ঘাঁটি থেকে বিতাড়িত করে দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে। পাকিস্তানী হানাদারদের শিবিরে শিবিরে এখন ত্রাহি ত্রাহি হাঁক উঠেছে।
ঢাকা থেকে AFP সংবাদদাতা এক তারবার্তায় জানাচ্ছেন : শত্রুবাহিনী অধিকৃত ঢাকার সঙ্গে গত সোমবার থেকে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঢাকা-যশোর, ঢাকা- ঈশ্বরদী, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কুমিল্লা এক কথায় বাংলাদেশের সকল আভ্যন্তরীণ রুটে পি-আই-এ’র সকল সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। গত মার্চের পর ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার একমাত্র যোগাযোগ ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ন্ত্রিত পি-আই-এ সার্ভিস। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণের মুখে তাও বিনষ্ট হয়ে গেল। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিসেনারা বর্তমানে চারদিক থেকে শত্রুবাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা শত্রুবাহিনীকে সমূলে নিধন করে চলেছে। সর্বত্রই চলেছে মুক্তিবাহিনীর অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা। ঢাকার মাত্র আঠারো মাইল দূরে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা মুন্সীগঞ্জ শহর আক্রমণ করে। মুক্তিসেনারা মুন্সীগঞ্জ থানার পুলিশদের ওপর আক্রমণ করলে থানার একজন পুলিশ অফিসার ও বহু পুলিশ নিহত হয়। মুক্তিসেনারা বিজয় দর্পে সারা শহরে কুচকাওয়াজ করেন। মুক্তিসেনারা মুন্সীগঞ্জ মহকুমার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী থানা দুটিও পুড়িয়ে দিয়ে ঢাকার এক বিশাল এলাকাকে শত্রুমুক্ত করে। গত রাতে অস্ট্রেলীয় বেতারের এক সংবাদ বুলেটিনে বলা হয় : বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী যে দুর্বার আক্রমণ চালিয়েছে তার সঙ্গে একমাত্র বাংলাদেশের গত ঘূর্ণিঝড়েরই তুলনা করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আমরা উল্লেখ করবো : গত সপ্তাহে NEWSWEEK- এর সিনিয়র এডিটর মি: বোচগ্রেভ তাঁর An unwinnable Guerilla war -শীর্ষক রিপোর্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন : পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এখন এমন এক দুর্জয় গেরিলা যুদ্ধের ফাঁদে পড়েছে যেখান থেকে তাদের মুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৮৫) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪০
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা