25 C
আবহাওয়া
৬:৫৮ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫১ (নওগাঁ-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৫১ (নওগাঁ-৬)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নওগাঁ-৬ আসনের হালচাল।

নওগাঁ-৬ আসন 

নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসনটি আত্রাই ও রানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫১ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ-৬ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৯ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ১ শত ৮৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিবির ওহিদুর রহমান। তারা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৭ শত ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির আলমগীর কবিরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৩ শত ৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ওহিদুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৫৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী হন

২০০১ সালের  ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৫ হাজার ২ শত ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩ শত ৫৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির আলমগীর কবির বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ৬ শত ৯৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮২ হাজার ২ শত ১৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম বিজয়ী নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২১ হাজার ৪৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩০ হাজার ৬ শত ৫৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আনোয়ার হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৭ হাজার ৩ শত ১৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন : নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬শত ৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিল ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আলমগীর কবির। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শাহজাহান আলী প্রমানিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলম নির্বাচিত হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮ শত ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আলমগীর কবির। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ৫০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন হেলাল নির্বাচিত হন

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইস্রাফিল আলম। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রানীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও রানীনগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পারভীন সুলতানা বিউটি। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহিন মনোয়ারা হক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নওশের আলী, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রীসভায় ২০০৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারি আলমগীর কবির। বিএনপির শেষ সময়ে তিনি ‘বিএনপিকে চাকরবাকরের দল’ এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দল ত্যাগ করে এলডিপিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আবার তাকে দলে ফিরান এবং বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেন।

বিএনপি থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন গত ১৫ বছর ধরে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির হাল ধরে রাখা আলমগীর কবিরের ছোট ভাই, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু। নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু। নওগাঁ জেলা তাঁতী দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এছাক আলী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন রানীনগর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী শাহজাহান আলী প্রমানিক আবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নওগাঁ -৬ আসনে পঞ্চম, ৬ষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, নবম, দশম, ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নওগাঁ -৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.৮৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.১৮ %, বিএনপি ৪৬.০১%, জাতীয় পার্টি ২.৮৫%, জামায়াতে ইসলামী ১৪.৯৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৯% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.২১% ভোটার । প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৩৬%, বিএনপি ৫১.৫২%, জামায়াতে ইসলামী ৫.১২%, জাতীয় পাটি ৫.৬৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৫০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৫৮%, ৪দলীয় জোট ৫৩.৭৪%, জাতীয় পার্টি ১.৪৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.১৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৬৯%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.৬৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৬৭% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নওগাঁ-৬ আত্রাই ও রানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি বিএনপির ঘাটি। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির দলত্যাগ করে এলডিপিতে গেলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিতে ফেরেন এবং মনোনয়ন পান। তার দীর্ঘদিনের বিএনপিতে অনুপস্থিতিতে দলকে সামলে রেখেছিলেন তার ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু। নবম, দশম ও একাদশ সংসদের আওয়ামী লীগের কান্ডারি ইসরাফিল আলম। তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অগ্রগতিতে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া রয়েছে অন্তদলীয় বিরোধ। জাতীয় পাটি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৫১ নম্বর নওগাঁ-৬ আসনটির দখল রাখতে আওয়ামী লীগের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন ভোট যুদ্ধ।

প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যদের জানার সুযোগ দিন। প্রতিদিন ধারাহিকভাবে প্রচারিত আসনভিত্তিক গবেষণামূলক প্রতিবেদন গুলো দেখুন এবং নিজের রাজনৈতিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন। লাইক, কমেন্ট, ও সাবস্ক্রাইব করে ‘বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর’ এর সঙ্গে থাকুন।

বিএনএ/ শিরীন, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ