১৯৫৭ সালে কাগমারীতে আওয়ামী লীগের এক সম্মেলন আহ্বান করে সোহরাওয়ার্দীর বৈদেশিক নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। এ মতবিরোধ থেকে দলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। সে বছরই মাওলানা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন এবং তিনি দলের সভাপতি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানী সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হন। মাওলানা তখন থেকে প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতির চর্চা শুরু করেন।
মাওলানা ভাসানী ১৯৭০ সালের নির্বাচন বর্জন করেন। তবে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারত গমন করেন এবং মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
মাওলানা ভাসানী দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মতো ভাষা-আন্দোলনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে তাঁর অবদান রয়েছে। ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে তাঁরই সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন। ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় বৈঠকে মাওলানা ভাসানীর প্রস্তাব ও আগ্রহে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের বেশ কয়েকটি বৈঠক মাওলানার বাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল কর্মসূচিতে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুমোদন থাকা সত্বেও তিনি ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, পাবনা ও কুমিল্লা সফরে বের হয়ে যান। ফলে একুশের ঘটনার দিন তিনি ঢাকা ছিলেন না।
২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসে তিনি সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিটি সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিম্নে উদ্ধৃত করা হল:
“পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর বিবৃতিতে বলেন, কর্তৃপক্ষ কি করে এরূপ নির্মম ও অমানুষিক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারেন তা আমার পক্ষে বোঝা শক্ত। প্রতিবাদ দিবসের প্রাক্কালে ১৪৪ ধারা জারি করার কোনোই যৌক্তিকতা ছিল না। এই বিষয়ে আর বেশি কিছু আলোচনা না করে ঘটনার জন্য আমি একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং অপরাধীদের প্রকাশ্যে বিচারের জন্য দাবি করছি” (সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২)।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বিরুদ্ধে ১৩ মার্চ ১৯৫২ তারিখে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হলে তিনি কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১০ এপ্রিল ১৯৫২ তারিখে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক (১৬) মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী