25 C
আবহাওয়া
২:৫১ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ডা. ক্যাপ্টেন আবুল কাশেমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডা. ক্যাপ্টেন আবুল কাশেমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ডা. ক্যাপ্টেন আবুল কাশেমের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিএনএ, চট্টগ্রাম: স্বাধীন বাংলাদেশের গণ-পরিষদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য চট্টগ্রামের কৃতি পুরুষ ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। শনিবার (৪ এপ্রিল ১৯৯৯) মধ্যরাতের অব্যাবহিত পরেই ৮৮ বছর বয়স্ক এ কর্মযোগীর জীবনাবসান হয়। আজ মরহুমের নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় মরহুমের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচী সমূহের মধ্যে রয়েছে মরহুমের করবে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল এবং আলোচনা সভা।

মরহুম ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেম ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আবুল হাসেম ছিলেন তৎকালীন রাঙ্গুনিয়া থানার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট। মরহুম ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেম ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কলারশীপসহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৩৪ সনে চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুল হতে স্বর্ণ পদকসহ এলএমএফ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৩৪ সালে এলএমএফ ডিগ্রী অর্জনের পর ১৯৩৭ সালে মেডিকেল স্কুলে শিক্ষকতার কাজে নিয়েজিত হন। ১৯৪০ সালে তিনি প্রেষণে তৎকালীন বৃটিশ ভারতীয় বাহিনীর আর্মি মেডিকেল কোরে যোগাদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চলাকালে ভারতীয় যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য তাঁকে মধ্যপ্রাচ্য প্রেরণ করা হয়। এ সময় তাঁর সাহস, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং সেবা পরায়ণতার জন্য তিনি বৃটিশ সেনাবাহিনীর মর্যাদাপূর্ণ ক্যাপ্টেন র‌্যাস্ক প্রাপ্ত হন। ১৯৪৫ সালে তৎকালীন বৃটিশ ভারতে তার চাকুরী ইন্ডিয়ান হেলথ সার্ভিসে ন্যাস্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ অধীনতা হতে দেশ মুক্ত হলে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং স্যার সলিম-উল্যাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস কোর্সে যোগদান করেন। ১৯৪৮ সনে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগদান করেন এবং ঢাকা মেডিকেল স্কুল ও স্যার সলিম উল্যাহ মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বল্প শিক্ষিত মহিলাদের স্বাস্থ্য সেবায় যোগদানে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা স্কুল বা নার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে লিখিত পরিকল্পনা এবং সুপারিশ পেশ করেন।

১৯৬৩ সালে ডা. ক্যাপ্টেন আবুল কাশেম খুলনার সিভিল সার্জনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এসময়ে তাঁর প্রচেষ্টায় চালনা পোর্ট মেরিনার্স হসপিটাল খুলনা সদর হাসপাতালে ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, পৃথক মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড স্থাপিত হয়। ১৯৬৫ সালের শেষ প্রাপ্তে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি সরকারি চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করে নিগৃহীত বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতকে শক্তিশালী করে বাঙ্গালীর মুক্তি সনদ ৬ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রাম জোরদার করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চাকুরীরত থাকা অবস্থায় বাঙ্গালীদের প্রতি পশ্চিমা বেনীয়া পাঞ্জাবী শাষক, শোষক চক্রের রূঢ় ব্যবহার প্রত্যক্ষ করে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা তিনি সঞ্চয় করেছিলেন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৬ দফার পক্ষে বিভিন্ন সভা সমিতিতে তার যুক্তিপূর্ণ ওজস্বী বাগ্নীতায়। এই সময় তিনি তৎকালীন চট্টল শার্দূল জননেতা এমএ আজিজের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে এক দফা অর্থাৎ পূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করার কাজেও আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে রাঙ্গুনিয়া এলাকা থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর চরম আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেম নিজের মেধা ও মননশীলতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীন সর্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যূদয় হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেমের উপর বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি পূর্ণ-গঠনের দায়িত্ব অর্পন করেন। ১৯৭১ হতে ১৯৭৪ইং পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জাতীয় রেডক্রস সোসাইটির (বর্তমান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি) সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে এর পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো তৈরী করেন। এ সময় তিনি কোনরূপ পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি। ১৯৭৪ সালে তিনি জাতীয় রেডক্রস সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই সাথে ১৯৭৪ হতে ১৯৭৭ সন পর্যন্ত তিনি জাতীয় রেডক্রস সোসাইটির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেম ১৯৭১ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টি.বি এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম টি.বি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭১ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের বহুমুত্র সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭৩ সন থেকে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্ণস এর সদস্য ছিলেন।

ডা. ক্যাপ্টেন আবুল কাশেম ১৯৭১ থেকে ১৯৭৬ ইং পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ জনসংখ্যা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। একই সময় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিঃ এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশে কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে ছিলেন।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই এলাকার নির্বাচিত গণ প্রতিনিধি হিসাবে যুদ্ধ বিদ্ধস্থ রাঙ্গুনিয়ার পুনর্বাসন এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধে হাজার হাজার গৃহহীন আদম সন্তানের জন্য মাথা গোজার ঠাঁই তৈরী, শত শত একর পতিত কর্ষনযোগ্য জমিতে আবার চাষাবাদের কাজ শুরু করার জন্য তিনি “স্ব-নির্ভর রাঙ্গুনিয়া” প্রকল্প তৈরী করে সারা বাংলাদেশে একক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ছিলেন। চট্টগ্রামের শষ্য ভান্ডার বলে কথিত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে শুষ্ক মৌসুমে জলসেচ করার ব্যবস্থা করে গুমাই বিলকে তে-ফসলা উর্ব্বর ভূমিতে পরিণত করেছিলেন। তাঁর এ সমস্ত জনহিতৈষী কাজের ফলে রাঙ্গুনিয়াবাসী ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে তাঁকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে।

ডা. ক্যান্টেন আবুল কাশেম তরুণ বয়সে চাকুরীর সুবাধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমন করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি ১৯৭৬ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মেডিকেল কনফারেন্সে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করেন। এ সম্মেলনে তিনি জৈষ্ঠ্য সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরী। ১৯৭৩ সালে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মেডিকেল কনফারেন্সেও তিনি যোগদান করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে রুমানিয়ায় বুখারেষ্টে বিশ্ব জনসংখ্যা কনফারেন্সে যোগদান করেন। একই সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আই.পি.পি.এফ-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৫ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী ও জনসংখ্যা বিষয়ক সন্মেলনে যোগদান করেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে ১৯৭৮ সালে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের জেনেভা কনফারেন্সে যোগদান ছাড়াও ডা. (ক্যাপ্টেন) আবুল কাশেম বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে শ্রীলংকা, বোম্বে ও কলিকাতায় অনুষ্ঠিত পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক অনেক সম্মেলন ও সিম্পোজিয়ামে যোগদান করেছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তিনি মষ্কো, সিঙ্গাপুর এবং সৌদি আরব-ও সফর করেছেন। ১৯৯৯ সালের ৪এপ্রিল তাঁর এই বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ