এতেকাফ কাকে বলে
ইতিকাফ (Itikaf) আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পরা বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। এতেকাফ আরবি ‘আকফ’ মূল ধাতু থেকে গঠিত একটি শব্দ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষের দশ দিন বা অন্য কোনো দিন বৈষয়িক কাজকর্ম ও নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি করার উদ্দেশ্যে পুরুষরা মসজিদে ও মহিলারা ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।
এতেকাফ কয় প্রকার ও কি কি
ইসলামী শরীয়তে ই‘তিকাফ ৩ প্রকার।
(ক) ওয়াজিব ই‘তিকাফ : ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে ওয়াজিব ই‘তিকাফ হলো মানতের ই‘তিকাফ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ ‘‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।’’ (সূরা হাজ্জ : ২৯)
(খ) সুন্নাত ই‘তিকাফ : রমযানের শেষ ১০ দিনের ই‘তিকাফ। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যেমন :
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারী : ২০২৫; মুসলিম : ১১৭২)
(গ) মুস্তাহাব ই‘তিকাফ : উল্লেখিত দু’প্রকার ব্যতীত বাকী সব মুস্তাহাব ইতেকাফ।
এতেকাফ করার নিয়ম ও নিয়ত
ইতিকাফের উদ্দেশ্য মসজিদে বসে আল্লাহর আনুগত্য, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের আকাঙ্ক্ষা, সওয়াব অর্জনের প্রত্যাশা এবং লাইলাতুল কদর লাভের আশা করা। প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশক রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিতভাবে মসজিদে ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও ইতিকাফ করতেন।
নবীজি ইতিকাফের এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, কখনো তা ছুটে গেলে ঈদের মাসে আদায় করতেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন।
এ আমল তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত কায়েম ছিল। নবী করিম (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর বিবিগণও এ নিয়ম পালন করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) ইতিকাফের বিধিসম্মত সময় মাহে রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যায়।
ইতিকাফকারী পুরুষ ২০ রমজান আসরের নামাজের পর সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছাবেন এবং কোণে একটি ঘরের মতো পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে অবস্থান নেবেন; এমনভাবে যেন প্রয়োজনে জামাতের সময় পর্দা খুলে মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা যায়।
এ স্থানে পানাহার ও শয়ন করবেন এবং বিনা প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবেন না। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বা ফরজ গোসল প্রভৃতি কাজে অথবা শরিয়তের প্রয়োজনে যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া জায়েজ। জাগতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগের জন্য পুরুষদের মসজিদে এবং নারীদের জন্য গৃহে অবস্থান করাই ইতিকাফ।
স্ত্রীলোকের মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরুহ। ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে তিনি নামাজ আদায় করেন, সেখানেই ইতিকাফ করবেন। বাড়ির নির্দিষ্ট স্থান না থাকলে যেকোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে ইতিকাফ করবেন এবং ঈদের চাঁদ উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করবেন না।
প্রত্যেক ইতিকাফকারী রোজাদারের আল্লাহর ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও তওবা-ইস্তেগফারে ব্যস্ত থাকা এবং পার্থিব বিষয়ে কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা থেকে দূরে থাকা অত্যাবশ্যক।
ইতিকাফের প্রকারভেদ
এবার আমরা জেনে নেই ইতিকাফের প্রকারভেদের বিবরণ:
সুন্নত ইতিকাফ
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতিকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গোনাহ হবে। (দুররে মুখতার: ২/৪৪০)। ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতিকাফের সময়। কারণ রাসুল (সা.) প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতিকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়।
ওয়াজিব ইতিকাফ
মান্নতের ইতিকাফ ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।’ (সূরা হজ: ২৯) তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন- কেউ বললো, ‘আমার এই কাজ সমাধা হলে আমি ইতিকাফ করবো’, এতে যেমন ইতিকাফ ওয়াজিব হবে ঠিক তেমনই কেউ যদি বলে- ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করবো’, এ অবস্থাতেও ইতিকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১৩, দুররে মুখতার: ২/৪৪১) সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।
নফল ইতিকাফ
উপরোক্ত দুই প্রকার ইতিকাফ ছাড়া বাকি সব ইতিকাফ নফল। এ ইতিকাফ মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতিকাফের নিয়ত করা সুন্নত।
সর্বোত্তম ইতিকাফ
ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান মসজিদুল হারাম, এরপর মসজিদে নববী, এরপর মসজিদে আকসা। এরপর জুম‘আ মসজিদ, এরপর যে মসজিদে বেশি মুসল্লি সালাত আদায় করে থাকে। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন, ইতিকাফ সহীহ হবে এমন মসজিদে যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতের সঙ্গে আদায় করা হয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেনো মসজিদে হারামে ইতিকাফ আদায় করে। এটি সওয়াবের ও জামাআতের দিক থেকে সর্বোত্তম।
ইতিকাফের শর্ত
মুসলমান হওয়া, পাগল না হওয়া, বালেগ হওয়া, নিয়ত করা, ফরজ গোসলসহ হায়েজ নেফাছ থেকে পবিত্র হওয়া, রোজা রাখা। মসজিদে ইতিকাফ করা। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর মতে যে মসজিদে জামাআত সহকারে সালাত হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।
এতেকাফের নিয়ম
যেভাবে এতেকাফের নিয়ত করবেন-
রমজানের সুন্নত বা নফল ইতিকাফের জন্য নিয়ত হল মনের ইচ্ছা, সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা করা। ইতিকাফের নিয়ত অন্তরের কাজ মুখের উচ্চারণ খুব জরুরী বিষয় নয়। আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য মনে ইতিকাফের সংকল্প বা ইচ্ছা করাই ইতিকাফের নিয়ত। তবুও অনেকেই অন্তরে স্বীকার ও মুখে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নিচে ইতিকাফের নিয়ত আরবিতে দেওয়া হল।
ইতিকাফের নিয়ত আরবিতেঃ নাওয়াইতু আন সুন্নাতুল ইতিকাফ-মাদুমতু হাজাল মাসজিদ।
ইতিকাফের নিয়ত বাংলা অর্থঃ আল্লাহর নামে, আমি প্রবেশ করলাম ও তাঁর উপরই ভরসা করলাম এবং ইতিকাফ করার ইচ্ছা পোষণ করলাম।
এভাবে ইতিকাফের জন্য মসজিদে ঢোকার সময় অন্তরে ইতিকাফের নিয়ত করবেন। ইতিকাফের সময়টাকে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। এই সময়টায় ইতিকাফের অনেক ফজিলত লাভ করা যায়।
ইতিকাফ করা কি ফরজ
পবিত্র কোরআনে (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭) বলা হয়েছে। ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে কোনো নফল ইবাদত না করলেও ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। তবে অতিরিক্ত নফল ইবাদত করলে আরও বেশি ফজিলতের অধিকারী হবেন।
ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত
মুসলমানদের নিকট পবিত্র রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ইতিকাফের গুরুত্ব এত দিতেন যে কখনো তা ছুটে গেলে ঈদের মাসেই আদায় করে নিতেন। নবী করীম (সা) বলেন, যে ব্যক্তি সারাজীবনে একবার হলেও ইতিকাফ করবে, কিয়ামতদের দিন জাহান্নাম তার কাছ তজেকে ১৫শ বছর পথ দূরে থাকবে। তাহলে হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত ইসলামে অনেক।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যখন কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে (মাকামে ইব্রাহিম) নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেয়ো না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন মহান আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো মানুষের জন্য, যাতে তারা (মানুষ) তাকওয়া লাভ করতে পারে। (সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ১৫/১৫, আয়াত: ১২৫, মঞ্জিল: ১, পারা: ১ আলিফ লাম মিম, পৃষ্ঠা: ২০/১৮)।
হজরত আয়িশা (রা) বর্ণনা করেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) আজীবন রমজানের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর বিবিগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।
ইতিকাফের গুরুত্ব
মাহে রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব অধিক। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ তার জাগতিক সব কিছু ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা ই কিফায়া। এজন্য মসজিদে মহল্লার লোক জনের পক্ষ থেকে একজন হলেও ইতিকাফ করতে হয়। যদি কোন মহল্লার মসজিদে কেউ ইতিকাফ না করে তাহলে ঐ মহল্লার সবাই দায়ী থাকবে। আর মহল্লার পক্ষ থেকে কেউ একজন আদায় করলে মহল্লার সবাই দায়মুক্ত হবে। তবে যিনি বা যারা ইতিকাফ আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তারাই ইতিকাফের সওয়াবের অধিকারী হবেন।
তবে আজকাল দেখা যাচ্ছে কোন কোন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম বা কমিটির লোকজন, এমনকি মহল্লার স্থানীয় কেউই ইতিকাফ করছেন না। সেই সব মসজিদে বাইরে থেকে কাউকে ভাড়া করে এনে ইতিকাফ করান। এতে ইতিকাফের গুরুত্ব , ফজিলত কিংবা উদ্দেশ্য অর্জন হয় না।
১০ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে সেই ইতিকাফ নফল ইতিকাফ হিসেবে গন্য হবে। ইতিকাফের জন্য রোজা শর্তারোপ করা রয়েছে। অর্থাৎ ইতিকাফের সময় যে ব্যক্তি বা যারা ইতিকাফ করবে তাদের রোজা রাখতে হবে। তবে অল্প সময়ের জন্য অর্থাৎ এক দিনের কম সময়ের জন্য রোজা শর্ত প্রযোজ্য নয়। নফল ইতিকাফের জন্য মানত বা ইতিকাফ শুরু করে ছেড়ে দিলে, সেই ইতিকাফ পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়। এবং ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত ও একদিনের কম সময়ে ইতিকাফ আদায় হবে না।
ইতিকাফের অন্যতম গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য হল শবে কদর প্রাপ্তি। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব (র) বলেছেন যে, ইতিকাফের উদ্দেশ্য হল সৃষ্টির সাথে সাময়িকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সাথে পরিচয় যত দৃঢ় হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ততো গভীর হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।
পুরুষদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করতে হয় আর নারীরা বাড়ির নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবেন। ইতিকাফ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে (নির্দিষ্ট স্থানে)। (সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা)
ইতিকাফের ফজিলত
রমজানের ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। ইতিকাফের ফজিলত অনেক। এর মধ্যে মধ্যে একটি হল, ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে অন্য কোন নফল ইবাদত না করলেও তিনি ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। ইতিকাফকারী যদি আরো নফল ইবাদত করে তাহলে আরো বেশী ফজিলত লাভ করবে। নফল ইবাদত সমূহের মধ্যে রয়েছে, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া, পূর্বের কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা, জিকির করা, তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা ইত্যাদি।
রমজান মাসের ইতিকাফের ফজিলত সমুহের গুরুত্ব অনেক। ইতিকাফের নিয়ত করা ইতিকাফকারীর জন্য দুইটি হজ্জ ও দুইটি ওমরার সওয়াব রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা) ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে বলেন যে, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুইটি হজ ও দুইটি ওমরার সওয়াব রয়েছে। (বায়হাকী)
ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আর নামাজের এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন। যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে এবং নামাজ তাকে আটকে রাখবে, তার পরিবারের কাছে যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না। ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতেই থাকবে। (মুসলিম-৬০১১)
ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত ইসলামে অপরিসীম। ঈমান বৃদ্ধি করার একটি বড় সুযোগ হল ইতিকাফ। মহান আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহকে ইতিকাফ কি, ইতিকাফের নিয়ত যেভাবে করতে হয় এবং ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
যে ব্যক্তি রমজান পেল কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করতে পারল না
রমজান মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে বিশেষ রহমত স্বরুপ। রোজা রাখার কারণে মানুষ অনেক খারাপকাজ, চোখ, কান, হাত ও পায়ের গুনাহ এবং নিজের শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষা পায়। চিকিৎসকরা বলেন, রোজার কারণে মানুষের শরীরের বহু ধরনের উপকার হয়। এ মাসে শয়তানকে বেধে রাখা হয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার সম্মুখে আমার প্রসংগ উত্থাপিত হল অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করল না। অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার জন্য রমযান মাস এলো এবং তার জন্য মাগফিরাতের ফয়সালা না হতেই তা চলেও গেলো। অপদস্থ হোক সে ব্যাক্তি, যার পিতামাতা উভয়কে অথবা যে কোন একজনকে তাদের বার্ধ্যকের অবস্থায় পেলো অথচ সে তাদের খিদমত ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না। [তিরমিযী]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, জিবরীল আমীন (আঃ) রাসুল (সাঃ) ঐ বদ দু’আতে আমীন! আমীন! বলেছিলেন। [ইবনে খযাইমাহ]
তাই যে ব্যক্তি রমজান পেল কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করতে পারল না তাকে ইসলামের দৃষ্টিতে মন্দভাগ্য বলা হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের মাহে রমজানের যথাযথ মর্যাদা আদায় করার মাধ্যমে আমাদের গুনাহ মাফ করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
বিএনএনিউজ/ বিএম, জিএন