বিএনএ: বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এবার বিশ্বের ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে করা সূচকে ১০’র মধ্যে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর পেয়ে ৭৩তম স্থানে বাংলাদেশ। গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম এবং স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘গণতন্ত্র সূচক ২০২২’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইআইইউ প্রতিটি দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা যাচাই করতে পাঁচটি মানদণ্ড ব্যবহার করে। সেগুলো হলো নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক স্বাধীনতা ।
ইআইইউ প্রত্যেকটি মানদণ্ডকে ০ থেকে ১০ স্কোরের মধ্যে রেখে গড় হিসেব করে। এরপর প্রাপ্ত স্কোর অনুযায়ী দেশ ও অঞ্চলগুলোকে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে- পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা।
হিসেব অনুযায়ী, একটি দেশকে ‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক’ অবস্থায় যেতে হলে গণতান্ত্রিক সূচকে ৯ থেকে ১০ স্কোর করতে হয়। যেসব দেশের স্কোর ৭ থেকে ৮ সেসব দেশকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ বলা হয়েছে। এর নিচের অবস্থান ‘হাইব্রিড রেজিম’-এ তালিকাভুক্ত দেশগুলোর স্কোর ৫ থেকে ৬ এবং ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ দেশগুলোর স্কোর ০ থেকে ৪ এর মধ্যে।
তবে দুই ধাপ অগ্রগতি হলেও গত কয়েকবারের মতো এবারও হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার স্তরেই রয়েছে বাংলাদেশ। ১০’র মধ্যে যেসব দেশের স্কোর ৪ থেকে ৬’র মধ্যে, তারাই এই বিভাগে রয়েছে। এই বিভাগে সবার ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। সবার নিচে মৌরিতানিয়া। দেশটির অবস্থান ১০৮তম, স্কোর ৪ দশমিক শূন্য ৩। এই বিভাগে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার আছে ভুটান (৮৪তম), নেপাল (১০১তম), পাকিস্তান (১০৭)।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে ভারত ৭ দশমিক ০৪ স্কোর (৪৬তম) এবং শ্রীলঙ্কা ৬ দশমিক ৪৭ স্কোর পেয়ে ৬০তম স্থান লাভ করে ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় রয়েছে। তালিকায় শূন্য দশমিক ৩২ স্কোর পেয়ে সবার নিচে রয়েছে আফগানিস্তান (১৬৭তম)।
এবারের সূচকে পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ হচ্ছে ২৪টি। ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে ৪৮টি দেশ রয়েছে। হাইব্রিড শাসনব্যবস্থায় দেশ রয়েছে ৩৬টি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় রয়েছে ৫৯টি দেশ।
এবারের গণতন্ত্র সূচকে ৯ দশমিক ৮১ স্কোর পেয়ে শীর্ষ স্থানে আছে নরওয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে নিউজিল্যান্ড (৯.৬১), তৃতীয় আইসল্যান্ড (৯.৫২)। সুইডেন চতুর্থ (৯.৩৯), ফিনল্যান্ড পঞ্চম (৯.২৯)।
ইআইইউ সূচকে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিভাগে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র (৩০তম), মালয়েশিয়া (৪০তম), ইন্দোনেশিয়া (৫৪তম), সিঙ্গাপুর (৭০তম)।
এবারের গণতন্ত্র সূচকে সবার নিচে রয়েছে আফগানিস্তান (১৬৭তম)। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা বিভাগের এই দেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৩২। এই বিভাগের অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার (১৬৬তম), উত্তর কোরিয়া (১৬৫তম), মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র (১৬৪তম), সিরিয়া (১৬৩তম), চীন (১৫৬তম), ইয়েমেন (১৫৫তম), ইরান (১৫৪তম), সৌদি আরব (১৫০তম), রাশিয়া (১৪৬তম)।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সেই সব দেশগুলোকে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করেছে, যে দেশগুলোতে নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনা ঘটে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিরোধী দল এবং প্রার্থীর ওপর সরকারি চাপ খুবই সাধারণ ঘটনা; রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সরকারের সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়ে মারাত্মক দুর্বলতা দেখা যায়, যা ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেও বেশি। দুর্নীতির বিস্তার প্রায় সর্বত্র এবং আইনের শাসন খুবই দুর্বল। সিভিল সোসাইটি দুর্বল; সাধারণত, সাংবাদিকরা সেখানে হয়রানি ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন নয়।
ইকোনমিস্ট ইনটিলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সে সময় গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১ (ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র), যা এপর্যন্ত সর্বোচ্চ। এরপর ২০০৮ সাল থেকে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।
বিএনএনিউজ