নিজস্ব প্রতিবেদক : ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আর বাড়াল না বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকারদের মতামত শুনেই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা না বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত নিল ব্যাংকটি। যদিও কোভিড-১৯ মহামারীতে সৃষ্ট দুর্যোগে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের উৎপাদন ও রফতানিতেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির এখনো উত্তরণ ঘটেনি। দেশের অর্থনীতি এখনো ঘুরে দঁাড়াতে পারেনি, এমন পরিস্থিতিতে দেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আশা করছিলেন ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো ছয় মাস বাড়ানো হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের সেই আশা ভঙ্গ করে ব্যাংকারদের কথামতো ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো থেকে বিরত থাকছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনার কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা এখন সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী মহল আশা করছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের কষ্টের কথা বুঝবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ব্যাংকারদের কথায় ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা আর বাড়ানো হচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, আরো অন্তত এক বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো উচিত।
প্রসঙ্গত প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের শুরু থেকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা স্থগিত করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের নির্দেশনায় ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঘোষিত ডেফারেল সুবিধা বা পেমেন্ট হলিডে কার্যকর ছিল বিদায়ী বছরজুড়ে। যদিও নীতি ছাড়ের এ সুযোগ নেননি সব গ্রাহক। তবে যেসব গ্রাহক করোনাকালে বিপদে পড়েছেন, কেবল তারাই ডেফারেল সুবিধা নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ডেফারেল সুবিধা নেয়া ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এটি বিতরণকৃত ঋণের ২৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশে ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালের শুরু থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল ডেফারেল সুবিধা। এই সময়ে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে বিদায়ী বছরে ব্যাংকগুলোকে এক টাকাও পরিশোধ করতে পারেনি অনেকে। যা ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় ২০ শতাংশ। অবশ্য ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থেকে এক বছর মুক্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ দেশের ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল আরো ছয় মাস বাড়ানোর। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি নাকচ করে মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরইমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে খেলাপি ঋণের সময় গণনা শুরু হয়েছে। ডেফারেল সুবিধা নেয়া গ্রাহকদের জানুয়ারি থেকেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ব্যবসায়ীদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমি আইন প্রণয়নের স্থান জাতীয় সংসদে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমি সেখানে বলেছি, আমাদের অন্তত আরও ছয় মাস সময় দেওয়া উচিত। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কথা না শুনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতামতের গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরে ঋণগ্রহীতারা সবচেয়ে বেশি ডেফারেল সুবিধা নিয়েছেন সরকারি মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক থেকে। তবে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেক থেকে কোনও অর্থই আদায় হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সাল শেষে অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে ২০২০ সালে ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ডেফারেল সুবিধার আওতায় পড়েছে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির অর্ধেকের বেশি গ্রাহক বিদায়ী বছরে কোনও অর্থ ফেরত দেননি। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, মহামারী করোনাকালে ব্যবসায়ীরা বিপদে ছিলেন। এখনো অনেকে বিপদে রয়েছেন।