নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়(এনএসইউ) প্রতিনিধি : বিরল রোগ হচ্ছে এমন একটি রোগ যা প্রতি ১০০০০ এ সর্বোচ্চ ৫ জনের মধ্যে থাকতে পারে। এই রোগ গুলোর ৮০%ই জিনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। এবং এসকল রোগের লক্ষন গুলো ৮৩% ক্ষেত্রে শুরু হয় ১৬ বছরের আগেই। ৮৯.৬ % বিরল রোগই মানুষের বিকাশকে বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশকে প্রভাবিত করে। সারাবিশ্বে বিরল জিনগত রোগ আছে মূলত ৭০০০, যেগুলি প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষের মাঝে বিস্তার করছে।
সম্প্রতি বেশ কিছু টেকনোলজি আছে যা দিয়ে বিরল রোগের জিনগত ত্রুটি নির্ণয় করা যায় যেমন: Microarray, Targeted Sequencing, Whole Exome Sequencing (WES) এবং Whole Genome Sequencing (WGS). এই রোগ গুলো বৈশিষ্টগত এবং জিনগতভাবে অনেক জটিল হওয়ার কারণে Microarray এবং Targeted Sequencing করে সর্বাপেক্ষা বেশি সংখ্যক জেনেটিক ত্রুটি বের করা সম্ভব হয় না। WGS অনেক ব্যায়বহুল এবং এর এনালাইসিস প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় , বেশিরভাগ দেশ রোগ নির্ণয়ে প্রথমেই এই টেস্টটি করে না।
অন্যদিকে, cost effective এবং অপেক্ষাকৃত কম সময়ে এনালাইসিস এর মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য American College of Medical Genetics and Genomics (ACMG) guideline অনুসারে, Whole Exome Sequencing কে জেনেটিক রোগের প্রথম রোগ নির্ণয়কারি টেস্ট হিসেবে উন্নত দেশের হাসপাতালগুলো Exome Sequencing দ্বারা রোগ নির্ণয় করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে মানুষের বিরল রোগ গুলোর জেনেটিক ডায়াগনসিস করার পর্যাপ্ত facilities এর অভাব থাকায় সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছেনা।
নিউরোজেন ২০১৬ সালে প্রথম জিনোমিক বায়োটেক কোম্পানি হিসেবে একটি Human Genetics ল্যাবরেটরি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করে। এর পরেই মানুষের জেনেটিক রোগ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জনবল দিয়ে বিরল রোগসহ বিভিন্ন জেনেটিক রোগের, যেমন : অটিজম, ADHD , খিঁচুনি, সিস্টিক ফিব্রোসিস, Duchenne মাস্কিউলার ডিস্ট্রোফি (DMD), স্পাইনাল মাস্কিউলার এট্রোফি (SMA), হাইপার কোলেস্টেরোলেমিয়া, রেট সিনড্রোম , ডাউন সিনড্রোম , উইলসন ডিজিজ, সেরিব্রাল পালসি, নিউরোমেটাবোলিক ডিসর্ডার -এর মতো রোগ গুলির ডায়াগনসিস নিয়ে কাজ শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই সর্ব প্রথম বিরল রোগ ট্রি-ম্যান সিনড্রোম এর জেনেটিক ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব হয় যা অত্যন্ত impactful জার্নাল ‘Clinical Case Report’ এ প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও, বেশ কিছু বিরল রোগসহ অন্যান্য রোগের জেনেটিক ত্রুটি উন্মোচিত হয়েছে যেগুলো বিভিন্ন সময়ে ভালো মানের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি নিউরোজেন আরো ৫জন রোগীর জেনেটিক ত্রুটি শনাক্ত করেছে যা Nature Partner Journal npj Genomic Medicine (IF 5.6) এ প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায়, নিউরোজেনের Genetics & Genomics Medicine বিভাগের PhD ফেলো হোসনেআরা আক্তার এবং তার টিম জেনেটিক ত্রুটি নির্ণয়ের মাধ্যমে ৫টি বিরল রোগের জিন শনাক্ত করেছে। এই রোগ গুলো হচ্ছে: 46,XY Gonadal Dysgenesis (GD), Mucolipidosis II alpha/beta ((ML II), Bardet-Biedl Syndrome (BBS), Leigh Syndrome (LS) এবং Spastic Paraplegia-47 (SPG47)। নিউরোজেনের গবেষকগণ সর্বমোট ৭ ধরণের জেনেটিক ত্রুটি ৫টি জিনে: DHH, GNPTAB, BBS1, SURF1, এবং AP4B1 এ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ৭ ধরণের ত্রুটির মধ্যে ২টি সম্পূর্ণরূপে নতুন শনাক্ত হয়েছে যা এর আগে কোনো মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়নি।
নিউরোজেনের সাথে এই কাজে সংযুক্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতত্ত্ব বিভাগ। এই গবেষণা থেকে আরো দেখা যায়, প্রত্যেকটি রোগীর বাবা এবং মা জেনেটিক ত্রুটির একটি কপি বহন করছে যা তাদের পরবর্তী সন্তানের মধ্যে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। জেনেটিক টেস্ট একটি পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে , যাদের সন্তানের জিনগত সমস্যা আছে এবং এর উৎস সম্পর্কে পরিবারের কোনো ধারণা নেই। এমনকি জেনেটিক টেস্টিং রোগীর রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত অন্যান্য টেস্টের বহনকেও হ্রাস করতে পারে। এই টেস্টের মাধ্যমে একটি পারিবারিক প্ল্যানিং দেয়া সম্ভব। দক্ষ জেনেটিক কাউন্সেলিং দ্বারা ভবিষ্যতে একটি পরিবার সম্ভাব্য কি কি জেনেটিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তা জানা সম্ভব ও পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো আধুনিকায়ন করতে হলে এইসকল রোগ গুলোর সঠিক নির্ণয় হওয়া অত্যাবশ্যক।
বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের মতে , WES একটি প্রথম সারির জেনেটিক টেস্ট যা দিয়ে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে জেনেটিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। জেনেটিক ডায়াগনসিস করে চিকিৎসা প্রদান করলে অচিরেই বাংলাদেশ Precision Medicine এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
বিএনএ/মহিউদ্দীন ইবনুল হোসাইন