29 C
আবহাওয়া
৬:৪৩ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এস.আলমের গাড়িতেই ‘সংবর্ধনা’ নিলেন সালাহউদ্দিন!

এস.আলমের গাড়িতেই ‘সংবর্ধনা’ নিলেন সালাহউদ্দিন!


১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম প্রকাশ এস আলমের সুসর্ম্পক রয়েছে। ওই সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র সহকারী একান্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর চারদলীয় জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া’র নেতৃত্বে সরকার গঠন করলে সালাহউদ্দিন আহমেদ মন্ত্রিপরিষদে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তারপর থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে সাইফুল আলমের সর্ম্পক আরও গাঢ় হয়। এই সর্ম্পকের সূত্র ধরে তারেক জিয়ার সঙ্গেও সুসর্ম্পক গড়ে ওঠে এস. আলমের।

YouTube player

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে ব্যবসায়ী এস আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তখন থেকে এস. আলমকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে থাকেন।

একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে গোপনে সর্ম্পক বজায় রাখে এস.আলম। তারেক ও এস আলমের এই সর্ম্পকের সেতু বন্ধন হিসাবে কাজ করতো সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি যখন সরকারবিরোধী আন্দোলন করছিল, তখন দলের মহাসচিবসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় সালাহউদ্দিন আত্মগোপনে থেকে দলের মুখপাত্র হিসেবে বিবৃতি দিতেন, গণমাধ্যমে কথা বলতেন। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার এস. আলমের একটি বাড়ি থেকে তৎকালীন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। এস. আলমই বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে লুকিয়ে রেখে ছিলেন।

বিএনপি তখন অভিযোগ করে, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সালাহউদ্দিন আহমদকে তুলে নিয়ে গেছে। এর ৬২ দিন পর ১১ মে সিলেটের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের মেঘালয়ে শিলংয়ের পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। তখন ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্‌ভ্রান্তের মতোক ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় সেখানকার পুলিশ। সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা এবং পরে অভিযোগ গঠন করা হয়। এই মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর শিলংয়ের নিম্ন আদালত সালাহউদ্দিন আহমদকে খালাস দেন। এর বিরুদ্ধে ভারত সরকার আপিল করে। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজ আদালত সালাহউদ্দিন আহমদকে খালাস দেন। শিলংয়ে থাকা অবস্থায় তাকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়।

দীর্ঘ ১০ বছর পর, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সালাহউদ্দিন দেশে ফেরেন। গত ২৮ আগষ্ট ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে আকাশ পথে কক্সবাজার বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে যে জীপে চড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার থেকে পেকুয়ায় পৌছান সেই কালো রংয়ের জীপটির নম্বর চট্ট মেট্রো ঘ-১১-১৫৩৩। এটি মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপ। আর ওই গাড়ির মালিক এস. আলম গ্রুপ। ২০১০ সালে এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে এটি নিবন্ধন করা। ঠিকানা লেখা আছে এস আলম ভবন, আছদগঞ্জ, চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ সড়ক পরিববহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এস আলম গ্রুপের গাড়িতে চড়ে এসে নিজ এলাকায় সংবর্ধনা নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শত শত লোক এসেছে। কার গাড়িতে উঠেছি জানি না। যে চালক গাড়িটি চালিয়েছেন, তিনি সাত-আট বছর ধরে আমার পরিবারের গাড়ি চালিয়ে আসছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় নগরের কালুরঘাট এলাকার একটি কারখানা থেকে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি কারখানা থেকে একের পর এক দামি গাড়ি বের হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি তা তদারক করছেন। যাঁরা ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, তাঁদের ভাষ্য, এগুলো শিল্প গ্রুপ এস আলমের গাড়ি এবং যাঁরা তত্ত্বাবধানে আছেন, তাঁরা বিএনপির নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক ও সদস্য মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিলুপ্ত করা হয়েছে বিএনপির দক্ষিণ জেলা কমিটি।

দেশের ছয়টি ব্যাংকের মালিকানা ছিল এই গ্রুপের। এসব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। গত ৫ই আগষ্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর একে একে সামনে আসে এস আলমের টাকা পাচারের বিষয়টি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এস আলম গ্রুপের কর্ণধার এস আলম ও তাঁর পরিবার, স্বজন. সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

এই অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এস. আলম গ্রুপের মালিকানাধীন গাড়িতে চড়ে গণ সংবর্ধনায় অংশ নেয়ার ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী/হাসনা

 


শিরোনাম বিএনএ