28 C
আবহাওয়া
৭:১২ অপরাহ্ণ - জুলাই ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এমপি হতেই শাহীনের সঙ্গে হাত মেলান মিন্টু!

এমপি হতেই শাহীনের সঙ্গে হাত মেলান মিন্টু!


বিএনএ : ঝিনাইদহ ৪ কালীগঞ্জ সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের তিন বারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এক বছর আগে কন্যা ডরিনকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক সভায় ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে  ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এতে বুঝা যায় সাইদুল করিম মিন্টু এবং আনোয়ারুল আজিম আনার দুইজন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও  তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল বেশ তীব্র। দুইজন কখনো এক মঞ্চে আসেননি। দুইজন দুই  মেরুতে ছিলেন। আর এর নেপথ্য কারণ সংসদ সদস্য পদ।

মিন্টু আনারকে সংসদ সদস্য হিসাবে কখনো মেনে নিতে পারেন নি। সব সময় তার চোখ ছিল কালীগঞ্জ সংসদীয় আসনের দিকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সাল থেকে সাইদুল করিম মিন্টু সংসদ সদস্য হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ২০১৪ সালের বিএনপি বিহীন সংসদ নির্বাচনে  আনোয়ারুল আজীম আনার খুব সহজে জয়ী হয়। যার ধারাবাহিকতা ২০১৮ সালের নির্বাচনেও অব্যাহত ছিল। প্রতিবারেই মনোনয়ন চেয়েছিল সাইদুল করিম মিন্টু। কিন্তু ব্যর্থ হন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন পান আনোয়ারুল আজিম আনার। বিএনপি বিহীন ওই নির্বাচনে সাইদুল করিম মিন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সাহস করেনি। কিন্তু আনারের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়া বা তার জন্য জনগণের কাছে ভোটও চাননি। তার মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তখন থেকেই ছিল। তার ধারণা ছিল আনোয়ারুল আজীম আনার বেঁচে থাকা অবস্থায় সংসদ সদস্য হওয়ার স্বাদ পূরণ হবে না। সে কারণে আনারের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান  শাহীনের সঙ্গে হাত মিলান। শাহীন আনারের বাল্য বন্ধু ও সোনা চোরাচালানের পার্টনার হলেও তার লভ্যাংশ আগের মতো পাচ্ছিলেন না। সেকারণে তাকে সরিয়ে দিয়ে সোনা চোরাচালানের একক অধিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। একদিকে শাহীনের চোরাচালানের গড ফাদার হওয়া, অন্যদিকে  সাইদুল করিম মিন্টুর উপ নির্বাচনে অংশ নিয়ে খুব সহজে সংসদ সদস্য হওয়ার সমীকরণ মিলে যায়।

এই অবস্থায় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে আনারকে সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে একবার, সংসদ নির্বাচনের পর কলকাতায় আরেকবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। দুই দফায় ব্যর্থ হয় শাহীন মিন্টুর মিশন। তৃতীয় দফায় গত ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সন্জীবা গার্ডেনে ক্লোরফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়।

কলকাতার নিউটাউনের সন্জীবা গার্ডেনে শাহীনের ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর  কিলার গ্রুপ লিডার আমানুল্লাহ প্রকাশ শিমুল ভূঁইয়া শাহীনের কাছে আনারের হাতপা চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা নগ্ন ছবি পাঠায়। সেই ছবি শাহীন ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে পাঠায়। সঙ্গে মেসেজ দেন আনার শেষ, নমিনেশন কনর্ফাম!

অন্যদিকে কিলার গ্রুপ শিমুল ভূঁইয়াকে ভাড়া করে শাহীনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণও সমাজকল্যান সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবু। শিমুল ভূইয়া গ্যাস বাবুকে মিন্টুকে হত্যাকান্ডের বিভিন্ন ছবি পাঠায় এবং  চুক্তির  দুই কোটি টাকার বাকী ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। ওই টাকা দেওয়ার কথা ছিল সাইদুল করিম মিন্টুর। সে কারণে সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্যাস বাবু ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে সার্কেল এলাকায় ডেকে নেয় এবং আনারকে হত্যাকান্ডের ছবি দেখায়। মিন্টুর কাছে  ওই সময় গ্যাস বাবু অগ্রীম দেওয়া ২০ লাখ টাকা বাদ দিয়ে বাকি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রদানের কথা জানায়। ২৩ শে মে টাকা দেওয়ার কথা পাকা হয়।

কিন্তু শিমুল ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আখতারুজ্জামান শাহীন, তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, মোস্তাফিজ, জিহাদ, সিয়াম, সাইদুল করিম মিন্টু ও কাজী কামাল আহমেদ প্রকাশ গ্যাস বাবুর কথা বলে দেয়। তখন সাইদুল করিম মিন্টুর পরার্মশ অনুয়ায়ি গ্যাস বাবু তার তিনটি মোবাইল পুকুরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মোবাইল হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে বলে।  গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন সংবাদ ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কারও থেকে পেয়ে যায় সাইদুল করিম মিন্টু। সে কারণে আলামত নষ্ট করার জন্য গ্যাস বাবুর মোবাইল পুকুরে ফেলে দিতে পরার্মশ দিয়েছিলেন মিন্টু। গ্যাস বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর জবানবন্দিতে মিন্টু আনার হত্যার বেনিফিশারি বলে উল্লেখ করার পর তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, পলাতক শাহীনের সঙ্গে সবারই যোগাযোগ ছিল। শাহীন খুব ঠাণ্ডা মাথায় সবপক্ষকেই ব্যবহার করেছে। সংসদ সদস্য আনার হত্যাকান্ডে সে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মিশন বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগ না থাকায় তাদের নাম অনেক পরে এসেছে।

এদিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় সিতাকুন্ড কালী মন্দির থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল ও মোস্তাফিজের পাসপোর্ট ,মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাসা থেকে উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। সংসদ সদস্য আনারকে খুন করতে  শাহীনই তাদের ভাড়া করে  এবং ভারতে যেতে পাসপোর্টও তৈরি করে দিয়েছিলো। আনারকে খুন করে দেশে এসে শাহীনের সাথে দেখাও করেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। তাদের পাসপোর্ট রেখে ত্রিশ হাজার টাকা দেয় শাহীন। পরবর্তীতে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে সীতাকুন্ডের পাতাল কালী মন্দিরে অবস্থানকালীন  হিন্দুদের পোষাক ধুতি পড়ে। ভাড়াটে কিলার ফয়সাল ও মোস্তাফিজ পলাশ ও শিমুল নাম ধারণ করে ফেরারী জীবন শুরু করেন। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ২৩ দিন পর আনার  কিলিং মিশনের সরাসরি অংশগ্রহণকারি ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে সীতাকুন্ডের দূর্গম পাহাড়ের পাতাল কালী মন্দির থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ