21 C
আবহাওয়া
৯:৩৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অচল ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অচল ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়


বিএনএ, ঢাকা: সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তি চান না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে হওয়া এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে দেশের ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। যার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ফেডারেশন ঘোষণা দিয়েছে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১৬ হাজারের কিছু বেশি৷ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার৷

দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস, পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতিও শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মবিরতিতে গেছেন৷ অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোমবার লাইব্রেরির সামনে ইটপাটকেল ছুড়েছেন৷

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে দাবি না মানা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া৷ তারা সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ এর প্রজ্ঞাপন বাতিল ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন৷

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রজ্ঞাপন জারির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন অধ্যাপকের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ ওই কমিটি বৈষম্যের জায়গাগুলো স্পষ্ট করেছে৷ ওই প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে৷ প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একমত৷ তাই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি৷ আমরা আগের সরকারি পেনশনেই থাকতে চাই৷’

ড. মো. মমিন উদ্দিন বলেন, ‘এখন যে সরকারি নিয়মে আমরা পেনশন পাই, তাতে আমাদের বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না৷ পুরোটাই সরকার বহন করে৷ কিন্তু নতুন নিয়মে আমাদের বেতনের শতকরা ১০ ভাগ কেটে রাখা হবে৷ আর একজন অধ্যাপক অবসরের সময় গ্রাচুইটি হিসাব এককালীন ৮০ লাখ টাকা পান৷ উনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন পেনশন পাবেন৷ মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী বা স্বামী মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পেনশন পাবেন, কিন্তু নতুন নিয়মে গ্রাচুইটি নেই৷ আবার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন দেওয়া হবে৷ পেনশনভোগীর স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষেত্রেও তাই৷’

অধ্যাপক মমিন উদ্দিন বলেন, ‘এই নতুন পেনশন এখন থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যোগ দেবেন, তাদের জন্য কার্যকর হবে৷ আমরা অধ্যাপকরা অবসরে গেলে পেনশন পাবো সরকারি নিয়মে মাসিক ৪৫ হাজার টাকা করে৷ কিন্তু এখন লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়ে যারা অবসরে যাবেন, তারা বেতনের ১০ শতাংশ করে দিয়ে অধ্যাপক হওয়ার পর অবসরে গেলে মাসে পাবেন এক লাখ ২৪ হাজার টাকা করে পেনশন৷ আমরা হিসাব করে দেখেছি, তারা চাকরি জীবনে যে পরিমাণ টাকা দেবেন, তা ব্যাংকে রাখলে যে আসল ও প্রিমিয়াম পাবেন তা-ও সমপরিমাণ৷’

‘ফলে নতুন পেনশনে নানা দিক থেকেই আমাদের সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এটা বৈষ্যম্যমূক৷ এটা আমাদের ওপর প্রভাব না ফেললেও নতুন যারা আসবেন, তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে৷ সরকারি চাকরি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার একটি বিষয় হলো অবসর জীবনে একটু ভালো থাকা, নিশ্চিত থাকা৷ কিন্তু এরকম হলে তো মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন’।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের আগামী বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নেওয়া হবে৷ তাদেরটার নাম হবে সেবক৷ তাদের জন্য আলাদা কেন? আর এক বছর পরে কেন? আমাদেরও সরকার সেবকে নিক এবং একই সময়ে নিতো৷ আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হলো কেন? এসব কী? এর নিশ্চয়ই ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে৷ এটা অবশ্যই বৈষ্যম্যমূলক৷’

অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা এই পেনশনে যে ক্ষতি ও বৈষম্য তা গবেষণা করে সরকারকে জানিয়েছি৷ শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে দেখা করেছি৷ কিন্তু, আমরা কোনো সমাধান পাইনি৷ তাই বাধ্য হয়ে আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি৷ আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে৷ এটা আমাদের মর্যাদা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন৷’

অর্থ মন্ত্রণালয় যা বলছে

পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পেনশন ব্যবস্থায় মাসে এখনকার চেয়ে ২ দশমিক ৭ গুণ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু এ জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে টাকা কাটা হবে। অবসরের পর এককালীন কোনো টাকা পাওয়া যাবে না, বছর বছর পেনশন বাড়বে না এবং পেনশনারের মনোনীত ব্যক্তি এখনকার মতো আজীবন পেনশন পাবেন না। আরও কয়েকটি সুবিধা না থাকার কথা উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলেন, সব মিলিয়ে নতুন ব্যবস্থায় তাদের সুবিধা কমে যাবে। এটা বৈষম্যমূলক।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এতদিন যে পদ্ধতিতে পেনশন সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তাতে বছর বছর এই খাতে ব্যয় বাড়ছে। সরকারের আয় দিয়ে এটি বহন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এতদিন অল্প সংখ্যক মানুষ পেনশনের আওতায় ছিলেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সরকার দেশের প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে।

এ কর্মসূচির আওতায় ‘প্রত্যয়’ স্কিমে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এর আওতায় আনা হয়েছে। শুধু এই স্কিমে চাকুরেদের বেতন থেকে টাকা কাটা হবে– এমনটি নয়। আগামী বছর জুলাইয়ে সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন কর্মসূচির আওতাভূক্ত হবেন এবং একইভাবে তাদেরও বেতন থেকে টাকা কাটা হবে। কারণ ‘অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সুবিধা’ সর্বজনীন পেনশনের মূল দর্শন।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মতে, সার্বিকভাবে পেনশন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের পেনশন সুবিধার সঙ্গে ‘প্রত্যয়’ স্কিমের লাভ-লোকসান তুলনা করার সুযোগ নেই। কারণ পদ্ধতি দুটি আলাদা। সংসদে পাস হওয়া আইনের মাধ্যমে নতুন চাকুরেদের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরোনো পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন পদ্ধতির সুবিধা নির্ধারিত হয়েছে। যাদের জন্য এটি প্রযোজ্য, তারা লাভবান হবেন।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ