31 C
আবহাওয়া
১:৫৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৫০ (নওগাঁ-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল :সংসদীয় আসন-৫০ (নওগাঁ-৫)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নওগাঁ-৫ আসনের হালচাল।

নওগাঁ-৫ আসন 
নওগাঁ-৫ সংসদীয় আসনটি নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫০ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ-৫ আসনে ভোটার  ছিলেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ১ শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২ শত ৯৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৩ শত ৬৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৪ শত ২৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৭০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফ্রিডম পাটির দেওয়ান আতিকুর রহমান । তিনি পান মাত্র  ৮ শত ৯০ ভোট ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে।  এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ১ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৪ শত ৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৪ শত ২৩ ভোট। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে, পরাজিত এই সংসদ সদস্যকে ১৯৯৮ সালে টেকনোক্র্যাট কোটায় বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল বিজয়ী হন

২০০১ সালের  ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৭ শত ৫১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৭ শত ৩৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৩ শত ৮২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামস উদ্দিন আহমেদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৪  হাজার ২ শত ৩৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল বিজয়ী নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭ শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৮ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬ শত ৪৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল লতিফ খান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯০ হাজার ৬ শত ৬২ ভোট।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় প্রথমবারের মতো নওগাঁ- ৫, সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মালেক বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৯ শত ৭৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৮১ হাজার ৬ শত ১২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মালেক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৮০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক। কলস প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৫ শত ৩২ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন : নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন জলিল বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৭ শত  ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫শত ৮৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির জাহিদুল ইসলাম ধলু। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন জলিল  নির্বাচিত হন। নৌকা  প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জাহিদুল ইসলাম ধলু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার৭ শত ৫৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

নওগাঁ-৫ (সদর), আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) , নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ইফতারুল ইসলাম বকুল। এছাড়া এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নওগাঁ -৫ (সদর)  আসনে পঞ্চম, ৬ষ্ঠ, ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নওগাঁ-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩. ৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.১৪ %, বিএনপি ৬৩.১০%, জাতীয় পার্টি ১.২১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৫৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৭১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৭৩%, বিএনপি ৫৩.৫%, জামায়তে ইসলামী ২.৪৮%, জাতীয় পাটি ২.০৫% স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৬৬% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৮৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫০.০১%, ৪দলীয় জোট ৪৮.৮৯%, জাতীয় পার্টি ০.৬৮%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৪২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৩৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৫৯%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.৫৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৮৭% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নওগাঁ-৫ (সদর) উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। জামায়াতে  ইসলামী ও জাতীয় পাটির সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৫০ নম্বর নওগাঁ-৫ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ