28 C
আবহাওয়া
৮:০৫ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » র‌্যাম্প নির্মাণে টাইগারপাসে শতবর্ষী গাছ কাটবে সিডিএ

র‌্যাম্প নির্মাণে টাইগারপাসে শতবর্ষী গাছ কাটবে সিডিএ


বিএনএ,চট্টগ্রাম:চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস থেকে সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) মুখী পাহাড়ি রাস্তার শতবর্ষী গাছ ও পাহাড়ের ঢাল কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই পদক্ষেপ, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করবে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প  নির্মাণ করতে সিডিএ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এই পদক্ষেপ গাছ ও পাহাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করবে।

ইতোমধ্যে গাছ কাটা ও জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে বন বিভাগ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে আবেদন করেছে সিডিএ।এটি নির্মাণে ১৪ শতক জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে সিডিএ।

যেসব গাছ কাটা হবে, সেগুলো গায়ে সাদা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে এই এলাকার পরিবশে রক্ষাকারী শতবর্ষী অর্ধশত গাছ কেটে ফেলবে সিডিএ।গাছ কাটার এই সিদ্ধান্তকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা র‌্যাম্প  নির্মাণের জন্য সিডিএ’কে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

পরিবেশ আন্দোলন গ্রিন ফিঙ্গারস বাংলাদেশের কর্মকর্তা রিতু পারভী বলেন, সিআরবি হেরিটেজ ঘোষিত এলাকা। সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাইলে চট্টগ্রামবাসী আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের কারণে রেলওয়ে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।পরিবেশ বিনষ্ট করে কোনো স্থাপনা সিআরবি ও আশেপাশের এলাকায় করতে দেয়া হবে না। র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করবো।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার সঙ্গে রেলওয়ের সিআরবি ও পলোগ্রাউন্ড মাঠের সংযোগ স্থাপনে পাহাড়ের ঢালে টাইগারপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়। সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশের ওপরের অংশে টাইগারপাস থেকে যাতায়াত এবং নিচের অংশে নিউমার্কেট থেকে টাইগারপাসমুখী সড়ক নির্মাণ করা হয়।

এটি স্থানীয় মানুষের কাছে দ্বিতল সড়ক হিসেবে পরিচিত। পাহাড় অক্ষুণ্ন রেখে চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এ সড়কের নামকরণ করা হয় ইউসুফ চৌধুরীর নামে। এ সড়কের বিভাজক হিসেবে রাখা হয়েছে পাহাড়ের ঢাল। সড়ক বিভাজকে রিটার্নিং ওয়াল ছাড়াও লাগানো হয়েছে কয়েকশ ছোট-বড় গাছ। বেশকিছু গাছের বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এসব গাছ পাখির আবাস এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখে।

সম্প্রতি ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শুরু করে। এর নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করা এ এক্সপ্রেসওয়ে গত বছরের নভেম্বরে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সব কাজ শেষ না হওয়ায় এটি এখনো যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করা হয়নি। সময়মত কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের ১৪টি র‌্যাম্পের মধ্যে একটি জিইসি মোড়ে, দুটি টাইগারপাসে, চারটি আগ্রাবাদে, একটি ফকিরহাটে, দুটি নিমতলায়, দুটি সিইপিজেডে এবং দুটি কেইপিজেডে নির্মাণ করা হচ্ছে। টাইগারপাস মোড়ে দুটি র‌্যাম্পের মধ্যে একটি হবে সিআরবি হয়ে নিউ মার্কেটমুখী সড়কে, অন্যটি হবে আমবাগানমুখী সড়কে।

দেওয়ানহাট ব্রিজের শেষ প্রান্ত সংলগ্ন অংশ থেকে টাইগারপাস মোড় ঘুরে সড়কের মাঝ বরাবর গিয়ে পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের অংশ পর্যন্ত প্রস্তাবিত র‌্যাম্পটি হবে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিআরবি এলাকায় র‌্যাম্প  নির্মাণ করা হবে। ফলে পাহাড়ি এ সড়কে র‌্যাম্প নির্মাণে গাছ কাটা হলেও পরিবেশের ক্ষতি হবে না। র‌্যাম্প নির্মাণে ৪৬টি গাছ কাটার পরিকল্পনা থাকলেও আমরা কয়েক গুণ বেশি গাছ রোপণ করবো। পাহাড়ের ঢালে দ্বিতল পদ্ধতিতে নির্মিত সড়কটির কোনো ক্ষতি না করে জাতীয় স্বার্থে র‌্যাম্পটি নির্মাণ করা হবে।”

যে এজন্য রেলওয়ের কাছ থেকে জমি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবে সিডিএ। রেলের বিদ্যমান প্রটেকশন ওয়াল না ভেঙে, পাহাড়কে সুরক্ষিত রেখেই সিডিএ র্যা ম্প নির্মাণের কাজ করবে ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন বলেন,সিডিএ আমাদের কাছে জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে। এ সংক্রান্ত পূর্ব রেলের ডিআরএম এর নেতৃত্বে আমাদের সাত সদস্যের একটি বিভাগীয় কমিটি আছে।অনুমোদনের আগে বিভাগীয় কমিটি জমিটি পরিদর্শন করবে। সেখানে কি পরিমাণ জমি আছে, কত গাছ আছে, গাছ কাটা হবে কিনা; সব বিষয় যাচাই করে বিভাগীয় কমিটি প্রতিবেদন দেবে। এরপর অনুমোদনের জন্য সদর দপ্তরে যাবে।

গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের যুগ্ম মহাসচিব সাংবাদিক মহসিন কাজী বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে গাছ কেটে নয়, র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য সিডিএকে অবশ্যই বিকল্প ভাবতে হবে। চট্টগ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে সরকারি কোনো সংস্থা শতবর্ষী গাছ কাটার চেষ্টা করলে আবার লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে।

‘গাছ বাঁচাও, চট্টগ্রাম বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে টাইগারপাস মোড়ে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা আসে। এতে বলা হয়, টাইগারপাস-সিআরবির শতবর্ষী গাছ কাটা যাবে না এবং চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বিতল সড়কটি অক্ষত রাখতে হবে।চট্টগ্রামের ‘আইকনিক’ সড়কের ঢালে গাছ কেটে র‌্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে টানা ১৫ মাসের আন্দোলনে সিআরবিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প বাতিল হয়েছিল।

পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, “আমরা কেউ উন্নয়ন বিরোধী নই। এই র‌্যাম্প এখানে কেন? এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার সময়ও শুরুর স্থান নিয়ে সমস্যা হয়। এটা দেওয়ানহাট থেকে শুরু করা যেত। তা না করে পাহাড় কেটে লালখান বাজার থেকেই শুরু করা হয়। নতুন করে গাছ রোপণ করবেন বলছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী। আপনি কি এরকম একটি দ্বিতল সড়ক করতে পারবেন? এই শতবর্ষী গাছ ফিরিয়ে দিতে পারবেন?”

অধ্যাপক মো ইদ্রিস আলী বলেন, “যারা সিআরবি ধ্বংস করতে পারেনি তারা এখন সিআরবির পরিবেশ ধ্বংস করতে চায়। তারা শতবর্ষী গাছ কেটে চারা লাগাতে চায়। ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নেই।”

বিএনএ নিউজ / রেহানা, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ