16 C
আবহাওয়া
৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত, প্রক্রিয়া শেষে প্রজ্ঞাপন

দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত, প্রক্রিয়া শেষে প্রজ্ঞাপন

JAMAT

বিএনএ ডেস্ক: ১৯৭১ সালের পর নিষিদ্ধ হয়েছিল জামায়াত। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থায় নেওয়ায় স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো নিষিদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী। ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের কারণে। তাতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সে সময় জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছিল সংবিধানের ৩৮ ধারার ক্ষমতাবলে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তাতে ফের বৈধভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায় জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে ৩৮ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বুধবার (৩১ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষ হলেই ঘোষণা করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রজ্ঞাপনে বলা হতে পারে, জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো। তাই এই সংগঠনকে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, নব্বই দশকে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন থেকে আবারও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় তা আরও জোরালো হয়। গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময়ে একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি অপূর্ণই থেকে গেছে এতদিন।

তরীকত ফেডারেশনের নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করেন। সংবিধানের সঙ্গে জামায়াতের গঠনতন্ত্র ‘সাংঘর্ষিক’ হওয়ায় হাইকোর্ট ওই রায় দেন। নিবন্ধন খুইয়ে নির্বাচন করার পথ বন্ধ হলেও দল হিসেবে জামায়াত ছিল নীরবে সক্রিয়। গত নির্বাচনের আগেও দলীয়ভাবে তাদের মিছিল-সমাবেশ করতে দেখা গেছে।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে ২০১৩ সালে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করেছিল আদালত। ওই বছরই আগস্টে গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে একাত্তরের ভূমিকার জন্য দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণারও আবেদন করা হয়। কিন্তু ওই বছর অক্টোবরে বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে মারা যান জামায়াত গুরু গোলাম আযম। ফলে সুপ্রিম কোর্টে ওই আপিল কার্যকারিতা হারায়, জামায়াত নিষিদ্ধের আবেদনটিও আর এগোয়নি।

২০১৬ সালে সরকার কয়েকবার নিষিদ্ধের কথা বললেও ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, আদালতে মামলা থাকার কারণে জামায়াতে ইসলামীকে সরকার নিষিদ্ধ করতে পারছে না।

জামায়াতের ইতিহাস : জন্মের পর ষাটের দশকে নিজেদের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য আরো দুবার নিষিদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ১১ দফাসহ বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াত। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, হত্যাকাণ্ডে সায় ও সহযোগিতার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, দেশের কোনো সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও জিয়াউর রহমানের সরকার আবার জামায়াতকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগে গোলাম আযম ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরে দলের আমিরের দায়িত্ব নেন।

সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন পায় এবং সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। ১৯৯৫ সালে জামায়াত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপন করে। পরে আওয়ামী লীগ এ দাবি নিয়ে মাঠে নামে। শুরু হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন। এখানে আওয়ামী লীগ-জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন করে। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনটি আসন পায় জামায়াত। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় জোটবদ্ধ হয় বিএনপি ও জামায়াত। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত পায় ১৭ আসন। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পান জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা।

একাত্তরে ন্যক্কারজনক ভূমিকার পরও খালেদা জিয়ার চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াকে লাখো শহিদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যুদ্ধাপরাধের এক মামলার রায়ে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দুটি আসন পায় জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ