বিএনএ, লামা (বান্দরবান): করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোভিড-১৯ রোগে এ মৃত প্রবাসী মো. জসিম উদ্দীনের (৪৮) কাফন ও দাফনের কাজ সম্পন্ন করলেন পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নস্থ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। শনিবার দিনগত রাতে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ ও নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। প্রচন্ড জ্বর অনুভব হলে গত ২০ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। মো. জসিম উদ্দীন চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের খান মোহাম্মদ সিকদার পাড়ার বাসিন্দা মৃত মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জসিম উদ্দীনের মৃত্যুর পর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে দাফনের কাজ সম্পপন্ন করার জন্য খবর দেন উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাফর আহমেদ। পরে রবিবার মৃতের নিজ গ্রাম লোহাগাড়া ইউনিয়নের খান মোহাম্মদ শিকদার পাড়ায় কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা দাফন কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবীরা পৌঁছে যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় জসিম উদ্দীনকে শেষ বিদায়ের গোসল, কাফন ও জানাজা জানাজা শেষে দাফন করেন তারা।
স্বেচ্ছাসেবী সদস্য ও সাতকানিয়ার ছিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা আশরাফ আমিন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা দাফন কার্যক্রমের সাথে তার অভিজ্ঞতার কথার বর্ননা দিয়ে বলেন, ‘একজন মৃতের দাফন করা আমাদের মানবিক দায়িত্ববোধের মধ্যেই পড়ে। শুধু দায়িত্ববোধ বলব না, এই কাজ অত্যন্ত সোয়াবের। তাই এই সেবা দিতে পারছি বলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আর আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাফন-দাফনের কাজ করি। ভয়ের আসলে কিছু নেই।’
কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা দাফন কার্যক্রমে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের শ্রেণি-পেশার স্বেচ্ছাসেবীরা। লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল খালেক করোনাকালে এই দাফন কাজের একজন একনিষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবী। তিনি বলেন, ‘আমরা যে কেউ যে-কোনো সময় মারা যেতে পারি। আর সেসময় যদি নিকট আত্মীয় আমার পাশে না থাকে সেটা আমার জন্যে খুবই দুঃখজনক হবে। তাই আমি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই এ কাজে যুক্ত হয়েছি।’
ব্যক্তিগত জীবনে মৃত জসিম উদ্দীন লোহাগাড়ার হোমিও চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামাল উদ্দীনের ছোট ভাই। ডা. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘২৫ বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করেছেন আমার ভাই। চার মাস আগে তিনি দেশে আসেন। কিছুদিন পরেই তার সৌদি আরবে ফেরত যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন তিনি না ফেরার দেশে! মৃত্যুকালে তিনি তার স্ত্রীসহ দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। আমাদের পুরো পরিবার শোকাহত। আর এই করোনার সময়ে আমার ভাইয়ের দাফনে কোয়ান্টাম যেভাবে সাহায্য করল, তাদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। সারা দেশে তাদের এই স্বেচ্ছা কার্যক্রম আরো এগিয়ে যাক।’
করোনায় মৃত জসিম উদ্দীনের দাফন সম্পন্নের সত্যতা নিশ্চিত করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানিয়ার পারভেজ মাসুদ জানান, করোনায় মৃতদেহ দাফন বা সৎকারে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রয়েছে দেশের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবী। রাজধানীসহ সারা দেশেই মমতার পরশে অন্তিম বিদায়ে চলছে তাদের নিরলস মানবিক এ সেবা কার্যক্রম। ২০২০ সালে করোনার শুরু থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত কয়েক হাজার মরদেহের স্ব স্ব ধর্মীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কর্মীরা।
প্রতিনিধি, মো. মনছুর আলী, এসজিএন