।। মনির ফয়সাল।। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। যা বিগত বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ৯ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয়। করোনাকালেও এবার প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২৩.২০ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত ২৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন কোন দপ্তর এই প্রথম ৫০ হাজার কোটি টাকার মাইল ফলক অতিক্রম করল। করোনা মহামারীর এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেও এই বিশাল অর্জনকে একটি মাইলফলক হিসাবে দেখছেন কাস্টমসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।অর্ধেকেরও কম জনবল নিয়ে কাজ করা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৮৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আগস্টে ৫ হাজার ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৫ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৫ হাজার ৯৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এছাড়া জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৬০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, মার্চে ৫ হাজার ৪৬১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৬ হাজার ২১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং জুনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
গত ২৬ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের প্রবৃদ্ধির হারের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে ১৩ অর্থবছরই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস প্রবৃদ্ধির হার সিঙ্গেল ডিজিট থেকে বের হতে পারেনি। এর মধ্যে আবার পাঁচ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক। বিশেষ করে ১৯৯৯-০০, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭, ২০১৩-১৪ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক থাকায় ব্যাপক রাজস্ব হারিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমম হাউস। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও গত এক দশকে মোটামুটি ভালো রাজস্ব আয় করেছে। বিশেষ করে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ছয় অর্থবছরে দুই অঙ্কের ঘরে প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছিল কাস্টমস। বাকি চার অর্থবছর অর্থাৎ ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভালো রাজস্ব আয় করতে পারেনি। কারণ এই অর্থবছরগুলোয় দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ দিকে করোনার ফলে রাজস্ব হারিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে শুল্ক স্টেশন চালু রাখাও চ্যালেঞ্জ ছিল। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে বন্দর কাস্টমস চালু রাখা হয়েছিল। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এগিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো দেশ এগিয়ে যাওয়া। আগামিতে আরো বেশি ব্যবসা বান্ধব হতে হবে এ শুল্ক স্টেশনকে। ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা যেন না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন
বলেন, করোনা মহামারিতে কাস্টমস হাউস খোলা ছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিএন্ডএফ সদস্যরা কাস্টমস হাউসে কাজ করেছে। এ অর্জন কাস্টমসে জড়িত সকলের।
বাংলাদেশ বাঙ্কার সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশন(বিবিএসএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন,
দেশপ্রেম ও আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। প্রবৃদ্ধি গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত ২৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এমন গৌরব অর্জন করায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানাই। কর ফাঁকি রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ,করোনাকালেও দিবারাত্র সেবা প্রদান ও ডিজিটাল সেবা যুক্ত হওয়ায় রাজস্ব অর্জন দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিবিএসএ সভাপতি মত প্রকাশ করেন।চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম এর কাজের প্রতি ডায়নামিক ভূমিকা,দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রম সর্বোপরি স্বজনপ্রীতি না করা ও শক্তিশালী সৎ ভূমিকার কারণে প্রকৃতপক্ষে অসামান্য সফলতা পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম
বলেন, এবার দুটি দিকে রেকর্ড হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম হলো বাংলাদেশের আর কোন সংস্থা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এককভাবে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছুঁতে পারেনি। চট্টগ্রাম কাস্টমসই প্রথম এই রেকর্ড অর্জন করল। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এই বছর। এর আগে ২০১০ সালে রাজস্ব আদায়ে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। জ্বালানি তেল, যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও ভোজ্য তেলসহ কয়েকটি খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব অর্জিত হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির সেরা অর্জন। আমদানি বেড়েছে বলেই রাজস্ব আদায় বেড়েছে। কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এ ব্যাপারে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে যথাযথ এসএস কোড এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখার সুফল মিলেছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় নির্ভরতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গত অর্থবছরে ৪১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এ ছাড়া প্রতিবছর অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব জোগান দেয় এই কাস্টম হাউস। এত কিছুর পরও ৪৮ শতাংশ কম লোকবল দিয়ে চলছে রাজস্ব আয়ে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে এই হাউস।
বিএনএনিউজ,এসজিএন