বিএনএ, ঢাকা : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদুল হক খান বলেছেন, বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও হিংসায় উন্মত্ত পাশবিক শক্তিকে দমন করার জন্য আজকের পৃথিবীতে বুদ্ধের শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লোভ, মোহ, হিংসা-দ্বেষ, লালসাকে অতিক্রম করে গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ ও সুশীল সমাজ গঠন ছিল তাঁর পরম লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের সুদীর্ঘ ইতিহাস অহিংসার ইতিহাস, সাম্য ও মৈত্রীর ইতিহাস। সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা এই ধর্মের একটি আবশ্যর্কীয় দিক। বুদ্ধ বলেছেন- শান্তি বাইরে থেকে আসেনা, শান্তি আসে মানুষের মন থেকে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সম্প্রদায়ের ন্যায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কল্যাণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৫ সাল হতে ‘প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রকল্প’ এর আওতায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ১০০টি শিক্ষা কেন্দ্রে ৬ হাজার বৌদ্ধ শিশুকে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ‘প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক-প্রাথিমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রকল্প’ ২য় পর্যায়ে ১২টি জেলার ৬২টি উপজেলায় ৩০০টি শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ২০ হাজার বৌদ্ধ শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। ৩০০ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মহিলা ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আমানত তহবিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার অতিরিক্ত চার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের ফলে বর্তমান ট্রাস্ট তহবিলের পরিমান সাত কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হতে বৌদ্ধ বিহার/প্যাগোডা মেরামত ও সংস্কারের জন্য ২০০৯-১০ হতে জুন, ২০২০ পর্যন্ত ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অনুদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের অস্বচ্ছল বৌদ্ধ বিহারে প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সাল হতে জুন, ২০২০ পর্যন্ত মোট ৩০ লাখ ৬১ হাজার টাকা চিকিৎসার জন্য অস্বচ্ছল ভিক্ষু/শ্রমণ ও অসহায় ব্যক্তিকে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ২০০৯ হতে জুন, ২০২০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে মোট ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেশের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছর ২০২১ সালে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উদ্যাপন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে আরো এক কোটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে যা সারা দেশের বৌদ্ধ বিহার সমূহে বিতরণের কাজ চলছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থায়নে নেপালের লুম্বিনীতে একটি বৌদ্ধবিহার নির্মাণের লক্ষ্যে ৬০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার একটি ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। নেপাল সরকার বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে আশ্রম/প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অনুকূলে একটি প্লট বরাদ্দ প্রদান করেছে।
বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন সভায় বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র সেন এমপি, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আরমা দত্ত এমপি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
অনলাইন আলোচনা সভায় বৌদ্ধদের ধর্মীয়গুরু ও বৌদ্ধ সমাজের এবং বৌদ্ধ সংগঠনের বিশিষ্ট নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএনিউজ/এসজিএন