বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে নলকুপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার পানির জন্য এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। নলকুপের পানি না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। দুই-একটি বাড়িতে গভীর নলকুপ ও সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হচ্ছে। সেই সব বাড়িতে সুপেয় পানির জন্য লম্বা লাইন দিতে দেখা গেছে এলাকাবাসীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোয়ালখালী পৌর এলাকার পূর্ব গোমদণ্ডী, পশ্চিম গোমদণ্ডীসহ উপজেলার সারোয়াতলী, শাকপুরা, কধুরখীল, আমুচিয়া, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপের অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দাদের নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার পানির জন্য এ-বাড়ি ও-বাড়ির টিউবওয়েলে ধর্ণা দিতে হচ্ছে সাধারণ পরিবারগুলোকে। অকেজো হয়ে গেছে শতশত শ্যালো টিউবওয়েল। কয়েকটি এলাকার নলকূপে মিলছে না পানি। এতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। দিন দিন এ সংকট আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সারোয়াতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, গত এক মাস ধরে টিউবওয়েল চাপলেও পানি উঠছে না। দূর দূরান্ত থেকে খাবার পানি এনে খেতে হচ্ছে। পুকুরে গোসলসহ থালাবাসন ধোয়া মোছার কাজ সারতে হচ্ছে বাড়ির মহিলাদের।
পৌর এলাকার চাকরিজীবী ঝুমুর সর্দার বলেন, যাদের ঘরে গভীর নলকূপ রয়েছে তাদের বাড়িতে প্রতিদিন দুই বেলা করে যাচ্ছি পানির জন্য। এনিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়- বিদ্যুৎ বিল উঠছে, এটা সেটা কতো কি। সামর্থ্য নেই বলে নিজে একটা গভীর নলকূপ বসাতে পারিনি।
শাকপুরার বাসিন্দা করিমুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর এই সময়টাতে পানি নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ব্যবহারের পানি তো দূরের কথা খাবার পানিরও সংকট দেখা দেয়। প্রচণ্ড তাপদাহে উপজেলার প্রায় এলাকার পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। পানি সংকটে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ নলকূপে পানি উঠতে সমস্যা হয়। তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত, শীত ও বসন্তে বৃষ্টিহীন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৫ দিন ধরে দূরদূরান্ত থেকে প্লাস্টিকের বালতি ও বোতলে করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন মধ্যম শাকপুরার আন্না চৌধুরী। তিনি জানান, ঘরে নলকূপ থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে পানি উঠছে না। মিস্ত্রি এনে দেখিয়ে ছিলাম। তারা বলছে সব কিছু ঠিক আছে। পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। এ সমস্যায় শুধু তিনি নন, তাদের আশেপাশের প্রায় ২০টিরও বেশি পরিবারের নলকূপে পানি উঠছে না।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুদর্শী দেওয়ান বলেন, সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সরকার গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিচ্ছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ প্রকল্প চলমান রয়েছে। পৌর এলাকায়ও নিদের্শনা পেলে গভীর নলকূপ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে দেওয়া নলকূপে পানি উঠছে না বা ইউনিয়ন পর্যায়ে পানির সংকট রয়েছে এই ধরণের অভিযোগ এখনো পাইনি। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। সাধারণত ভূগর্ভের পানির স্তর ২০-৩০ ফুটের নিচে নেমে গেলে শ্যালো টিউবওয়েলে পানি উঠে না। এবছর বোয়ালখালীতে বৃষ্টিপাত তেমন একটা হয়নি।
পৌর এলাকায় ঘন বসতি উল্লেখ করে সুদর্শী দেওয়ান বলেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নলকূপ রয়েছে। ফলে ভূগর্ভের পানির স্তরে চাপও বেশি। এতে পানির স্তর দিনদিন নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না।
এদিকে বোয়ালখালীতে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে আর নিরাপদ পানি পান না করায় ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সীমান্ত ওয়াদ্দাদার।
তিনি নিরাপদ বিশুদ্ধ পান করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। সহজ পাচ্য ও সদ্য রান্না করা খাবার খেতে হবে। যথাসম্ভব সরাসরি রোদে বেশিক্ষণ না থাকায় ভালো।
বিএনএনিউজ/বাবর মুনাফ