বিএনএ ডেস্ক:সিরাজগঞ্জের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকের ১০ গজের মধ্যেই গড়ে উঠেছে দ্য থাইরোকেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার। হাসপাতালে আসা রোগীদের বাগিয়ে নিচ্ছে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা। দূরত্ব বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সোমবার (১ মার্চ) দুপুরে হাসপাতালে আসা সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। হাসপাতালের গেটে আমাকে অপরিচিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, আপনার কী সমস্যা? আমি বলি, ভালো ডাক্তার দেখাতে এখানে এসেছি। তখন তিনি বলেন, আপনি থাইরোকেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে যান, ওইখানে ভালো ভালো ডাক্তার বসে। আমাকে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। ডাক্তার আমাকে দেখে বিভিন্ন টেস্ট করতে দেয়। আমি ডাক্তারের ভিজিটসহ বিভিন্ন টেস্টের জন্য ৩ হাজার টাকা বিল দেই।’
সরকারি হাসপাতালের আউটডোর থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে থাইরোকেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের পরিচালক ইমরুল হাসানকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালে কোনো দালাল নেই।’
সরকারি হাসপাতালের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে ২০২০ সালে অক্টোবরে এখানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার করার অনুমোদন পেয়েছি।’
রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী গ্রাম থেকে আসা সোহেল রানা বলেন, ‘পেটব্যথার চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে এসেছি। হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে দুই-তিনজন আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। আমি কোনো উত্তর না দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে যাই। ডাক্তার আমাকে একটি ব্যবস্থাপত্র দেন। আমি তার রুম থেকে বের হওয়ামাত্র ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সরকারি হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন সময়ে শিশু চুরি করা হচ্ছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল থেকে ২৩ দিনের বাচ্চা মাহিম এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সলঙ্গা থানার সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে জন্মের ৭ ঘণ্টা পর সামিউল নামের এক বাচ্চা চুরি হয়।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের আউটডোর থেকে প্রকাশ্যে রোগীদের বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সম্প্রতি দুই দালালকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। যদি এ ধরনের অপচেষ্টা কেউ করে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারি হাসপাতালের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো নিয়ম আছে কি না, আমার জানা নেই। আপনারা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেন।’
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দূরত্ব কত থাকতে হবে, এরকম কোনো নীতিমালা আমার জানা নেই।’