36 C
আবহাওয়া
৭:১১ অপরাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বোয়ালখালীতে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাস্তবায়িত হয়নি শহীদ ভবন

বোয়ালখালীতে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাস্তবায়িত হয়নি শহীদ ভবন


বিএনএ, চট্টগ্রাম: স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও অরক্ষিত অবস্থায় আছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার প্রথম স্মৃতিসৌধ। মুছে যাচ্ছে নামফলকও। এছাড়া ৩৫ বছর আগে স্মৃতিসৌধ ঘিরে একটি ‘শহীদ ভবন’ বা ‘স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও বাস্তবতার মুখ দেখেনি। অযত্নে পড়ে আছে স্থাপনাটি।

একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে দেশকে হায়েনামুক্ত করতে বোয়ালখালীর অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। ২৮ আগস্ট তৎকালীন থানা সদরের প্রধান রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করতে গিয়ে শহীদ হন অনেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন এস এম ওয়াজেদ, রেজাউল করিম বেবী, ওস্তাদ ফজলুল হক, দুদু মিয়া, মাস্টার নলিনী দাশগুপ্ত, অজিত বিশ্বাস, মনোরঞ্জন শীল, রণজিত মজুমদার, সমীর মজুমদারসহ আরো অনেকে।

তথ্যমতে, সেদিন পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কঞ্জুরী গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক শ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। তাদের স্মরণেই প্রথম স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড দক্ষিণ কঞ্জুরী গ্রামে। গ্রামের সেই নির্জন এলাকায় সেদিন অনেক শহীদের মৃতদেহ ফেলে রেখে যায় হায়েনারা। যুদ্ধের পর সেখান থেকে বিপুলসংখ্যক হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়।

বোয়ালখালী উপজেলার প্রথম এ স্মৃতিসৌধের সুরক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরও সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন সংস্কার হয়নি। তবে ১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর তত্কালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন খান ওই স্মৃতিসৌধ ঘিরে ‘স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স’ বা ‘শহীদ ভবন’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ৩৫ বছর অতিবাহিত হলেও ভিত্তিপ্রস্তরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ‘শহীদ ভবন প্রকল্প’। কোন পরিবর্তন হয়নি এ স্মৃতি স্তম্ভের।

এলাকাবাসীরা ক্ষোভ ও আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অযত্ন-অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মরা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় কোথায় তাদের! মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার সময় নেই তাদের। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিলেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে এসব থেকে এখনো বঞ্চিত। মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং সম্মানী দিলে জাতি গর্ববোধ করবে।

শহীদদের স্বজন ও স্থানীয়রা বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রতিবছর ২৮ আগস্ট বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতিটুকু ধরে রেখেছি। পর্যাপ্ত জমি থাকার পরও ওই ‘শহীদ ভবন’ না হওয়ায় যেকোনো সময় শহীদদের স্মৃতি মুছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সীমিত সাধ্যের মধ্যেই আমরা নামটি ৫৩ বছর ধরে আঁকড়ে রেখেছি। এখন সময়ের দাবি ভবন নির্মাণের। যেখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও দেশ মাতৃকা রক্ষায় যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মৃতি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন বই, পুস্তিকা নিয়ে সমৃদ্ধ পাঠাগার থাকতে পারে। এসব দেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে আগামী প্রজন্ম।

স্থানীয় বাসিন্দা দিগন্ত নাগ কপিল জানান, আমরা প্রতিবছর জাতীয় দিবসগুলোতে এই স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি। স্মৃতিসৌধ বা শহীদ ভবন নির্মাণ করলে ভবিষ্যত প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। এর ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুব্ধ হবে আগামীর ভবিষ্যত।

কঞ্জুরী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজিত নাগ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা যশ-খ্যাতি, কোটিপতি, প্রতাপশালী ও ক্ষমতার মালিক হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছিলাম মুক্তির জন্য, মা-বোনদের ইজ্জত ও দেশের মাটিকে রক্ষার জন্য। তা দেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে আগামী প্রজন্ম। স্মৃতিসৌধের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে যে বটগাছটি রয়েছে তার পাশে অসংখ্য মৃতদেহ পড়েছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়।

তিনি আরও বলেন, স্মৃতিসৌধ এলাকার খালি জায়গায় প্রতিবছর এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হত অমর একুশ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, গ্রামীণ লোকজ মেলা, খেলাধুলা ও আলোচনা সভা। এসব কর্মসূচিতে যোগ দিতেন বিশিষ্ট নাট্যজন, রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী। এখন আর এগুলো হয় না।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং এখানে একটি স্মৃতিসৌধ ও শহীদ ভবন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দাবি জানান।

বিএনএনিউজ/ বাবর মুনাফ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ