25 C
আবহাওয়া
১১:৩০ পূর্বাহ্ণ - মে ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাবা পিটানো, চোর মিল্টনের ‘মানবতার সেবক’ হওয়ার গল্প

বাবা পিটানো, চোর মিল্টনের ‘মানবতার সেবক’ হওয়ার গল্প

বাবা পিটানো, চোর মিল্টনের ‘মানবতার সেবক’ হওয়ার গল্প

।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।

বিএনএ, ঢাকা: সম্প্রতি আলোচিত সমাজকর্মী বরিশালের উজিরপুরের মিল্টন সমাদ্দারের উত্থান নিজ পিতাকে পিটিয়ে। এই অপরাধে এলাকাবাসী তাকে বাড়ি ছাড়া করেন। এরপর ঢাকার শাহবাগে এসে একটি ফার্মেসিতে কাজ শুরু করেন তিনি। ঔষধ বিক্রির টাকা চুরি করায় সেখানেও বেশিদিন টিকতে পারেননি মিল্টন। এরপর মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ নামের একটি কেয়ার সেন্টার স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন তারা। পরবর্তীতে প্রথমে মিরপুর এলাকায় পরে সাভারে চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামের দুইটি কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেন। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দিতেন। তাদের কষ্টের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে রাতারাতি মিল্টন সমাদ্দার মানবতার সেবক হিসেবে পরিচিত পান।

তবে মানবিকতার আড়ালে মিল্টন সমাদ্দার কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রি করতেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টিরও বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাহিরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।

রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়ায় মিল্টন সমাদ্দারের বৃদ্ধাশ্রমের কাছেই বায়তুল সালাম জামে মসজিদ। বৃদ্ধাশ্রমে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের একসময় এই মসজিদেই বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্নস্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন।

YouTube player

এ বিষয়ে মিল্টনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।’ পরে দু্‌ই তিন হাজার টাকা খরচ করে নিজের আশ্রমে তাদের গোসল দেন। এতেই মিল্টনের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

মিল্টন সমাদ্দারকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিল্টন এক সময় বাসা ভাড়া শোধ করতে পারতেন না। এখন তিনি প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক। দামি গাড়িতে চড়েন।

মিল্টন সমাদ্দারের দাবি, আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, তার আশ্রমে চিকিৎসার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়; যা অস্বাভাবিক।

আশ্রমের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেন মিল্টন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার।

অনুসন্ধানে উঠে আসে মিল্টনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি। তবে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এসব মরদেহ আবার বেশিরভাগ সময় রাতে দাফন করা হয়েছে। এ নিয়ে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। আশ্রমে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট ডাক্তারের সিল-স্বাক্ষর জাল করে মিল্টন নিজেই তৈরি করতেন।

সিনেমার নায়ক হতে চেয়েছিলেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ৯০ দশকে ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মান্নার সিনেমা দেখে নায়ক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন তিনি।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ মিল্টন সমাদ্দার তার ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টে মিল্টন লিখেছিলেন- ‘ছোটবেলা স্বপ্ন ছিল, নামকরা চিত্রশিল্পী হবো, ৯০ দশকে নায়ক মান্নার সিনেমা দেখে ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের নায়ক হবো। কোনোটাই হতে পারি নাই, এখন স্বপ্ন দেখি একজন সৎ ভালো মানুষ হবো। মৃত্যুর পরে অনেকেই বলুক লোকটা ভালো ছিল, দোয়া করে বলুক সৃষ্টিকর্তা স্বর্গবাসী করুন।’ কোটিপতি মুখোশধারি প্রতারক মিল্টন স্বর্গে যাওয়ার আগেই গণমাধ্যমের কাছে ধরা পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয়েছে কারাগারে।

বিএনএনিউজ/ বিএম/ হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ