36 C
আবহাওয়া
১:০০ অপরাহ্ণ - মে ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৭ (ঢাকা-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৭ (ঢাকা-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-৪ আসনের হালচাল।

YouTube player

ঢাকা- ৪ আসন
ঢাকা-৪ সংসদীয় আসনটি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ৪৭,৫১,৫২,৫৩,৫৪,৫৮ এবং ৫৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭৭ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৮ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ১৭ হাজার ৭ শত ১৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৩ শত ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাইফুদ্দীন আহমেদ মানিক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৪ শত ৫৪ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬ শত ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৫ শত ২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ৯ শত ৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ৫ শত ২২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৪ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯০ হাজার ৯ শত ৯০ জন। নির্বাচনে বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫১ হাজার ৩ শত ৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৩ হাজার ২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সানজিদা খানম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩ শত ৪৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সানজিদা খানম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি ৯২ হাজার ৯ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল হাই। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৭ শত ৯৯ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: জাতিয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসন বাবলা বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৫ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩৩ হাজার ২ শত ১৭ জন। নির্বাচনে জাতিয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসন বাবলা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি ১৭ হাজার ৭ শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন হাতি প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার ৭ শত ৮৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: জাতিয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসন বাবলা বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯ শত ২১ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। লাঙ্গল প্রতীকে সৈয়দ আবু হোসন বাবলা, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের কবির হোসেন , মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোট এর শাহ আলম, মশাল প্রতীকে জাসদ এর হাবিবুর রহমান শওকত ,মাছ প্রতিকে গণফ্রন্ট এর শহিদুল ইসলাম মোল্লা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল্লাহ , আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির সুমন কুমার রায় , গোলাপ ফুল প্রতিকে জাকের পার্টির আজাদ মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতিয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ৯ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সালাউদ্দীন আহমেদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৩ হাজার ১ শত ১৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ,অষ্টম সংসদে বিএনপি , সপ্তম ও নবম সংসদে আওয়ামী লীগ, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশিরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪১,৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.০৭%, বিএনপি ৪৭.৮৮%, জাতীয় পাটি ৫.৪৬% জামায়াত ইসলামী ৫.১৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৪০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৮৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.১১%, বিএনপি ৩৭.৩১% জাতীয় পাটি ৮.৩৮%, জামায়াত ইসলামী ৩.৩৭% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৮৩% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.২৭%, ৪ দলীয় জোট ৫২.০২% , জাতিয় পার্টি ৫.৩০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৭৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.০৬% , ৪ দলীয় জোট ৩২.৩৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৫৮%ভোট পায়।

ঢাকা-৪ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট হলে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মহাজোটের পক্ষে মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিএনপির একক প্রার্থী।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা-৪ সংসদীয় আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। কখনো আওয়ামী লীগ,কখনো বিএনপি, আবার কখনো জাতীয় পার্টি এই আসনে রাজত্ব করে। গত ১৫ বছর ধরে এই আসনটি আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় পার্টির দখলে। ফলে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এবং আগোছালো। বিএনপি নানা কারণে স্বাভাবিক সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে না পারলেও প্রচুর ভোটার রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক অবস্থা বেশ শক্ত না হলে ও বর্তমান সংসদ সদস্যের ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৭৭ তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-৪) আসনটিতে ফলাফল কী হবে তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৬ (ঢাকা-৩)

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ