28 C
আবহাওয়া
৪:২০ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৭

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৭

কারাগারের রোজনামচা

সেখানে আল্লার নাম লইবার লোক নাই একজনও; সেখানে আল্লার গজব পড়ে না। কলেরা, বসন্ত, কালাজ্বরও হয় না। আর আমরা রোজ আল্লার পথে আজান দিই, নামাজ পড়ি, আমাদের ওপর গজব আসে কেন? একটা লোক না খেয়ে থাকলে ঐ সকল দেশের সরকারকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় । আর আমার দেশের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক দিনের পর দিন না খেয়ে পড়ে আছে, সরকারের কোনো কর্তব্য আছে বলে মনেই করে না ।

তাই আমাদের দেশের সরকার বন্যা এলেই বলে ‘আল্লার গজব’। কিছু টাকা দান করে । কিছু খয়রাতি সাহায্য ও ঋণ দিয়ে খবরের কাগজে ছেপে ধন্য হয়ে যায় । মানুষ এভাবে কতকাল চলতে পারবে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নাই । বড় লোকদের রক্ষা করার জন্যই যেন আইন, বড়লোকদের আরও বড় করার জন্যই মনে হয় সিপাহি বাহিনী । এই দেশের গরিবের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই
আজ বড় বড় প্রাসাদ হচ্ছে, আর তারা দু’বেলা ভাত পায় না। লেখাপড়া, চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা ছেড়েই দিলাম। বন্যায় শত শত কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ নষ্ট হয়ে যাইতেছে প্রত্যেক বৎসর। সেদিকে কারও কোনো কর্তব্য আছে বলে মনে হয় না।

পাকিস্তানে রাজধানী একটা আছে করাচীতে, আরও দুইটা রাজধানী তৈয়ার করিতেছে । একটা রাওয়ালপিন্ডি, আধা রাজধানী, আর একটা রাওয়ালপিন্ডি থেকে ১২ মাইল দূরে ইসলামাবাদে। খরচ হবে ৫০০ কোটি টাকা। পূর্ব বাংলায় একটা তথাকথিত উপ রাজধানী শহরের সেরা জায়গা নিয়ে করছে একে রাজধানী না, পূর্ব বাংলাকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ‘প্রোপাগান্ডা রাজধানী’ করা হতেছে ।

পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী পূর্বেই রাজধানী ছিল, তারপর মধ্যবর্তী রাজধানী রাওয়ালপিন্ডি । তারপর ইসলামাবাদ। আর পূর্ব বাংলার বন্যা বন্ধ করার জন্য টাকার অভাব! এ দুঃখের কথা কাকে জানাব।

বাংলাদেশ শুধু কিছু বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদের জন্যই সারাজীবন দুঃখ ভোগ করল । আমরা সাধারণত মীর জাফর আলি খাঁর কথাই বলে থাকি । কিন্তু এর পূর্বেও ১৫৭৬ সালে বাংলার স্বাধীন রাজা ছিল দাউদ কারানী। দাউদ কারানীর উজির শ্রীহরি বিক্রম আদিত্য এবং সেনাপতি কাদলু লোহানী বেঈমানি করে মোগলদের দলে যোগদান করে। রাজমাবাদের যুদ্ধে দাউদ কারানীকে পরাজিত, বন্দি ও হত্যা করে বাংলাদেশ মোগলদের হাতে তুলে দেয় । এরপরও বহু বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এই বাঙালি জাত। একে অন্যের সাথে গোলমাল করে বিদেশি প্রভুকে ডেকে এনেছে লোভের বশবর্তী হয়ে । মীরজাফর আনলো ইংরেজকে, সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করল বিশ্বাসঘাতকতা করে। ইংরেজের বিরুদ্ধে এই বাঙালিরাই প্রথম জীবন দিয়ে সংগ্রাম শুরু করে; সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয় ব্যারাকপুর থেকে। আবার বাংলাদেশে লোকের অভাব হয় না ইংরেজকে সাহায্য করবার। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এই মাটির ছেলেদের ধরিয়ে দিয়ে ফাঁসি দিয়েছে এদেশের লোকেরাই সামান্য টাকা বা প্রমোশনের জন্য।

সূত্র :  কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ১১০-১১১, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

আরও পড়ুন :

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৬

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৫

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৪

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭৩

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব ৭১

কারাগারের রোজনামচা: পর্ব-৭০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ