35 C
আবহাওয়া
১২:২৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬৩(সিরাজগঞ্জ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬৩(সিরাজগঞ্জ-২)


বিএনএ,ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের হালচাল।

সিরাজগঞ্জ-২ আসন 

সিরাজগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনটি কামারখন্দ উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়ন, শিয়ালকোল, খোকশাবাড়ী, কাওয়াখোলা, কালিয়াহরিপুর, সয়দাবাদ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৬৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মির্জা মুরাদুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪ শত ৫৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৭ শত ২৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির মির্জা মুরাদুজ্জামান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৪ শত ৩৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোতাহের হোসেন তালুকদার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৩ শত ৭৬ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি 

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মতো সিরাজগঞ্জ- ২ আসনেও ভোটারা ভোট দিতে কেউ যায়নি। প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারা পুলিশ পাহারায় কেন্দ্রে বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয় ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করে। ফলে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচন কমিশন থেকে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২২ হাজার ৫ শত ৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬ শত ৩৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৫ শত ৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ কে সামশুল আল আমিন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৭ শত ৯ ভোট।
১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম দুটি আসনে দাঁড়ান সিরাজগঞ্জ-১ ও সিরাজগঞ্জ-২। উভয় আসনে জয়লাভ করার পর, তিনি সিরাজগঞ্জ-২ আসনকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বেছে নেন।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ইকবাল হাসান মাহমুদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫২ হাজার ১ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির ইকবাল হাসান মাহমুদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬ শত ৪০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯ হাজার ৪ শত ৮২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির রুমানা মাহমুদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫ হাজার ৪ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭১ হাজার ১ শত ২ জন। নির্বাচনে বিএনপির রুমানা মাহমুদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৮ হাজার ৪ শত ৩২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জান্নাত আরা হেনরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৬ হাজার ৪শত ১৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন:নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৪ শত ৩৫ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির রুমানা মাহমুদ, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহিবুল্লাহ, মই প্রতীকে বাসদের নব কুমার কর্মকার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাত বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭ শত ২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির রুমানা মাহমুদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৩ হাজার ৭ শত ৭৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কামারখন্দ উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়ন, শিয়ালকোল, খোকশাবাড়ী, কাওয়াখোলা, কালিয়াহরিপুর, সয়দাবাদ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ-২ আসনে পঞ্চম, অষ্টম ও নবম সংসদে বিএনপি, সপ্তম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সিরাজগঞ্জ- ২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৫.৮৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.৬৯%, বিএনপি ৪০.৯৪%, জাতীয় পার্টি ২.০৩%, জামায়াতে ইসলামী ২৩.৭৪% ,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৬০% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৮৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৬২%, বিএনপি ২৯.৬৭%, জামায়াতে ইসলামী ১২.৮৩%, জাতীয় পাটি ১৮.৩০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.০৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৪৮%, ৪দলীয় জোট ৫৫.০৬%, জাতীয় পার্টি ১.০৫%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪১% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৯৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৭.০০%, ৪ দলীয় জোট ৪৭.৭৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৫.২১% ভোট পায়।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান। প্রয়াত সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে শেহেরিন সেলিম রিপন, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও বর্তমান পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আবদুর রউফ মুক্তা ।
এ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দলের একক প্রার্থী। কোনো কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ প্রার্থী হবেন।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম ঝন্টু। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন সিরাজগঝ্জ জেলা সভাপতি মুফতি মাওলানা মো. মহিববুল্লাহ। একাদশ সংসদেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সহ-সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হক জিয়া।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ-২ আসনটিতে কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি শাসন করেছেন। সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সমানে-সমান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৬৩ নম্বর সিরাজগঞ্জ -২ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ভোটের লড়াই হবে তীব্র।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ