30 C
আবহাওয়া
৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩২ (গাইবান্ধা-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৩২ (গাইবান্ধা-৪)

গাইবান্ধা-৪

বিএনএ,ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে গাইবান্ধা-৪ আসনের  হালচাল।

গাইবান্ধা-৪  আসন

গাইবান্ধা-৪ সংসদীয় আসনটি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩২ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ আসনে ভোটার  ছিলেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৮ শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৪ শত ৮৮ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৭ শত ৮৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর আফাজ উদ্দিন আহমেদ । দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৫২ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে  বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ।

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিরোধও করে। বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে  বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ।

সপ্তম  সংসদ নির্বাচন:জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান চৌধুরী বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ২২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ২ শত ২০ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৪ শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোজ্জামেল হোসন প্রধান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৯ শত ১৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আব্দুল মোতালিব আকন্দ বিজয়ী 

২০০১ সালের  ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ২ শত ৯২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫ শত ১০ জন। নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মোতালিব আকন্দ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ১ শত ৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোজ্জামেল হোসন প্রধান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ১ শত ৬ ভোট।

নবম সংসদ  নির্বাচন:আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী  বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ  নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৬ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী  বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ২শত ১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর আব্দুর রহিম সরকার। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ১ শত ১১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫২  হাজার  ৬শত ২৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ১শত ৮১ জন। নির্বাচনে  স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিজয়ী হন। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ৫ শত ৪৬ ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৬ শত ১৪ ভোট।  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করে।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩  লাখ ৮৬  হাজার ২ শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির কাজী মশিউর রহমান,  হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম তুহিন,  কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশর বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির ছামিউল আলম, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি খন্দকার মো: রাশেদ, গোলাপফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আবুল কালাম, হারিকেন প্রতীকে  মুসলিম লীগের সানোয়ার হোসেন,  প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ধানের শীষ প্রতীকে ফকির কবির আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৮ শত ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী মশিউর রহমান। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫ হাজার ৭ শত ১৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী মশিউর রহমান কেন্দ্র দখল ও তার এজেন্টদের বের করার অভিযোগ নির্বাচন শুরু হওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে আবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য  প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী  । এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ   উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় পাট ও বস্ত্রবিষয়ক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম লিটন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন  সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক কবির আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম,  গোবিন্দগঞ্জ  উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহম্মেদ ও ওবায়দুল হক সরকার।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন  গোবিন্দগঞ্জ  উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী মশিউর রহমান  জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা লুৎফর রহমান চৌধুরী।ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সভাপতি আবদুল মতিন মোল্লা এবং সিপিবির উপজেলা সভাপতি অশোক আগারওয়াল ও সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।

আরও মনোনয়ন  চাইবেন  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, বাংলাদেশর বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি থেকে ছামিউল আলম,  ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে খন্দকার মো: রাশেদ,  জাকের পার্টি থেকে আবুল কালাম, মুসলিম লীগ থেকে সানোয়ার হোসেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-৪  আসনে  জাতীয় পার্টি   পঞ্চম, সপ্তম, বিএনপি অষ্টম এবং আওয়ামী লীগ নবম, দশম ও একাদশ সংসদে  বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর গাইবান্ধা-৪ আসনে ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান প্রদানের চেষ্ঠা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪০.৮৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪.৫০%, বিএনপি ১৩.৫১ %, জাতীয় পার্টি ২৯.২২%, জামায়াত ইসলামী ২১.০৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২১.৭১% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.৫০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.২৪ %, বিএনপি ১১.৪৭ %, জাতীয় পার্টি ৩৮.৯২%, জামায়াত ইসলামী ১৪.৫৯%, স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ৬.৭৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৫১ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.০৩%, ৪ দলীয় জোট ৪০.৯৮ %, জাতীয় পার্টি ২৬.৯৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৬৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৫১.৯৬%, ৪ দলীয় জোট ২৫.০৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল২২.৯৫% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাইবান্ধা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি  সাংগঠনিক অবস্থান সমানে সমান। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত না হলেও জামায়াত ইসলামীর ভোট ব্যাংক পুরোটাই বিএনপির বাক্সে যাবে। নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩২ নম্বর, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে   আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও  জাতীয় পার্টির  ত্রিমূখী লড়াই  হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ