24 C
আবহাওয়া
৫:০৩ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬১ (নাটোর-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৬১ (নাটোর-৪)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম।আজ থাকছে নাটোর-৪ আসনের হালচাল।

নাটোর-৪ আসন 

নাটোর-৪ সংসদীয় আসনটি গুরুদাসপুর এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৬১ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে  ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১০ হাজার ৪ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩ শত ৫১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৮ শত ৬০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোজাম্মেল হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান  ৪৭  হাজার ৬ শত ৫০ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যক্ষ একরামুল আলম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এতে বিএনপির অধ্যক্ষ একরামুল আলম বিজয়ী হন। তিনি পান ৩৯ হাজার ২ শত ৭০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পঞ্চম জাতীয় সংসদ বিএনপি প্রার্থী মোজাম্মেল হক। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পান মাত্র ৫ হাজার ১ শত ৩৫ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম  সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১১ হাজার ৮ শত ১৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ২ শত ৮৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোজাম্মেল হক । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৩ শত  ৭৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোজাম্মেল হক বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪ শত ২৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৪ শত ১৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোজাম্মেল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ  ১১ হাজার ৬ শত ২৬ ভোট।  তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৭৯ হাজার ৪ শত ৫০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস নির্বাচিত

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫ শত ৮৬  জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮২ হাজার ২ শত ৮০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬০ হাজার ৫ শত ৪৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোজাম্মেল হক হক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার  ৪ শত ৯ ভোট। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের  অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭১ হাজার ৭ শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২ হাজার ৫ শত ৪১ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আব্দুল আজিজ। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি আলাউদ্দিন মৃধা, কুড়েঁঘর প্রতীকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপের) হারুন অর রশীদ, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বদরুল আমিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে  তিনি পান ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫ শত ৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আলাউদ্দিন মৃধা, লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭ হাজার ৩ শত ৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়,  নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম)  আসনে পঞ্চম, সপ্তম, নবম দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা  বিজয়ী হন।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নাটোর-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৭৭%, বিএনপি ৩১.০২%, জাতীয় পার্টি ১২.৬৮%, জামায়াতে ইসলামী ১৯.০৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৪৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.১৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৫৯%, বিএনপি ৩৪.৪৩%, জামায়াতে ইসলামী ৭.১৪%, জাতীয় পাটি ১৯.৮৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৫৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৪.১৮%, ৪দলীয় জোট ৪৮.০৩%, জাতীয় পার্টি ৪.৩১%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ১৩.৪৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৩.৩৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৭.১৯%, ৪ দলীয় জোট ৪১.১১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.৭০% ভোট পায়।

নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস। তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলি কুদ্দুস মুক্তি।

এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রতন সাহা, প্রয়াত এমপি রফিক সরকারের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফ উদ্দিন সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ আলী মোল্লা ও কৃষক লীগ নেতা আবদুল ওয়াহাব।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ও নাটোর জেলা সভাপতি এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আজিজ, গুরুদাসপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মশিউর রহমান বাবলু, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোজাম্মেল হকের ছেলে ব্যারিস্টার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাদের মিয়া, বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নূর বাবুর স্ত্রী মহুয়া নূর কচি, বড়াইগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ইসহাক আলী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জন গোমেজ।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না জামায়াতে ইসলামী। সেক্ষেত্রে  নাটোর জেলা জামায়াতের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসাবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবুল কাসেম সরকার, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রাথী আলাউদ্দিন মৃধা।

দলীয় মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের হারুনুর রশীদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বদরুল আমিন, জাসদের নাটোর জেলা সাধারণ সম্পাদক ডি এম আলম।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) এ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। দীর্ঘদিন ধরেই আসনটি আওয়ামী লীগের কবজায়। কিন্তু দলটিতে রয়েছে অন্তদলীয় কোন্দল। যা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। বিএনপিতে দলীয় কোন্দল থাকলেও তা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত না হলেও বেশ ভোট রয়েছে। নানা রাজনৈতিক সমিকরণের মাধ্যমে বিএনপি হারানো আসনটির দখল ফিরে পেতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দখল বজায় রাখতে চায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৬১ নম্বর নাটোর-৪ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

বিএনএ/শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ