29 C
আবহাওয়া
৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
Bnanews24.com
Home » কুবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরবে কবে?

কুবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরবে কবে?


বিএনএ, কুবি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের তেমন কোন আনাগোনা নেই।দিনের বেশীরভাগ সময়ই পুরো ফাঁকা থাকে লাইব্রেরি। ১৭ বছর বয়সের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির অবস্থা এমন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উঠে এসেছে নানা সংকটের কথা।

শিক্ষার্থীরা জানান, পর্যাপ্ত একাডেমিক রেফারেন্স বইয়ের স্বল্পতা, ফটোকপি মেশিনের ব্যবস্থা না থাকা, ব্যক্তিগত বইপত্র নিয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকতে না পারার কারণে তারা লাইব্রেরি বিমুখ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য লাইব্রেরিতে যাওয়ার জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। পাঁচ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলার পূর্ব পাশে ছোট দুই কক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির অস্তিত্ব।

লাইব্রেরি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭,১৪১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা মাত্র ১০০টি। সর্বসাকুল্যে মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর বইয়ের সংখ্যা ১,১১০টি। এছাড়া অন্যান্য বিভাগের বই মোট ২৮ হাজার ৮৯০ টি। দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ২০ টি, জার্নাল ও রিপোর্ট সংখ্যা ১,৩৮০ টি, ম্যাগাজিন সংখ্যা ৫ টি, ই-বুক প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে ৩৫০০ টি Wiley Publication এবং ৫০০ টি Tstor, Research 4 Life সাইটের। ই-জার্নালের সোর্স হিসেবে Emerald, Tstor, Research 4 Life এ একসেস আছে। তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় বই ও অন্যান্য সুবিধা অপ্রতুল বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শাম্মি আক্তার বলেন, ” বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর প্রথমেই খুব আগ্রহ নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। পাঁচ তলার উপর লাইব্রেরী দেখে হতাশ হলাম সেদিনই। এরপর একাডেমিক রেফারেন্স বইয়ের খোঁজে ১ম সেমিস্টারে গিয়েছি সেখানেও খালি হাতেই ফিরতে হয়। কারণ বই নেই। এরপর কয়েকবার বইয়ের প্রয়োজনে গেলেও প্রতিবারই নিরাশ হয়েছি। তাই ইচ্ছেও কমে গেছে লাইব্রেরিতে বসার।”

এ বিষয়ে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী আল নাবিল সাদ বলেন, “একটি লাইব্রেরির প্রাণ হলো বই। অথচ আমাদের লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় একাডেমিক বইগুলোই নেই। চিত্ত বিনোদনের জন্যও যে কেউ কাব্য কিংবা উপন্যাসের ভালো কিছু বই পড়বে সে সুযোগ ও বন্ধ । চার বছর আগে যেই গল্প-উপন্যাসের বই ছিলো এখনও শেলফ জুড়ে সেগুলোরই বিচরণ নতুন বইয়ের অস্তিত্ব তেমন চোখে পড়েনি। তাই এখন লাইব্রেরি তে খুব একটা যাওয়া হয় না।”

লাইব্রেরির নানা সংকটে আক্ষেপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, ” বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদযন্ত্র এখানকার শিক্ষার্থীরা। অথচ আমাদের একাডেমিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাইব্রেরীর অবস্থানটাও আমাদের অনুকূলে হয়নি। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ৮ বছরে লাইব্রেরিতে যেতে পেরেছি মাত্র ৩ বার তাও সহপাঠীদের সহায়তায়। অথচ পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন রেফারেন্স বইগুলো মিলিয়ে পড়তে পারলে আরও ডেভেলপ করতে পারতাম।’’

শিক্ষার্থীদের আরো একটি বড় অভিযোগ লাইব্রেরিতে তারা নিজেদের বই নিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য চলতি বছরই পঞ্চম তলার পশ্চিম পাশের একটি রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো চালু হয়নি সেই রুমটি।

এই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মহি উদ্দিন মোহাম্মদ তারিক ভূঁঞা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের ইন্টেরিয়র কাজগুলোর জন্য আমরা স্পন্সর পেয়েছি। তারাই রুমটিকে বসার উপযোগী করে দিবে শিক্ষার্থীদের জন্য। তাদের লোকজন রুমটি পরিদর্শন করে গেছে। খুব দ্রুতই কাজ শুরু করবেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা ফান্ড লাগছে না।’

সার্বিক বিষয়ে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মহি উদ্দিন মোহাম্মদ তারিক ভূঁঞা বলেন, ‘একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির যে ধরনের কাঠামোগত, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং জায়গা প্রয়োজন তার কোনটাই আমরা রিচ করতে পারিনি। এগুলো মোকাবিলা করার জন্য যে আর্থিক সহযোগিতা দরকার তা এ বছরের (জুন) বাজেটে নেই। তবে নতুন বাজেটে লাইব্রেরি সংক্রান্ত একটা বাজেট থাকবে বলে আমাদের উপাচার্য মহোদয় আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এই সমস্যাগুলো নিয়ে আবারও কথা বলবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়াও আমাদের একটি প্রস্তাবনা থাকবে লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজেশন এবং সার্বিক কাজটা সহজ করতে ‘RFID’ প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি লাইব্রেরির চলমান কাজগুলোকে গতিময় করতে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজন। আশা করি খুব দ্রুতই আমরা এসব বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা পাবো। ‘

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘ আমার কাজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের নিয়েই। আমি সবসময় শিক্ষার্থীদের চাহিদা, অসুবিধা এসব নিয়ে চিন্তিত থাকি, কাজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। প্রায়ই লাইব্রেরি পরিদর্শনে যাওয়ার ফলে লাইব্রেরির এই সংকটগুলো সম্পর্কে আমি জানি। তবে শিক্ষার্থী তেমন চোখে পড়েনি। কারণ লাইব্রেরিটা আকর্ষণীয় না। আমরা লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বই, নোট নিয়ে বসে পড়ার জন্য নতুন রুম দিয়েছি, ফান্ড হলে সেটা গুছিয়ে ফেলবো। এছাড়াও বাকি যে সমস্যা গুলো আছে সেটিও নিয়েও আমাদের চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন,’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো আমি আসার প্রায় ১৬ বছর আগেকার হবে। এখানে ভবন করার সময় লিফট করার কোন জায়গা রাখেনি। তবুও ফান্ডের ব্যবস্থা হলে আমি তাদের জন্য ক্যাপসুল লিফটের ব্যবস্থা করব।’

বিএনএনিউজ২৪ডটকম

Total Viewed and Shared : 1113 


শিরোনাম বিএনএ