38 C
আবহাওয়া
৫:৫৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা ববির শেরে বাংলা হল ডাইনিংয়ের

অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা ববির শেরে বাংলা হল ডাইনিংয়ের


।। রবিউল ইসলাম।।

বিএনএ, ববি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছেলেদের দু’টি হলের একটি শেরে বাংলা হল। হলটিতে প্রায় ছয়শত শিক্ষার্থীর আবাসন রয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও নানান সংকট আর অব্যবস্থাপনায় বেহাল দশা হয়েছে ডায়িংয়ের।

হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তিনবেলা তিনমুঠো খেতে গিয়ে। হলের ডাইনিংয়ে অপরিষ্কার পরিবেশে নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে বিপাকে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়েই অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের খেতে হচ্ছে বাইরের দোকানগুলোতে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা পেটের পীড়া, ডায়রিয়ায়সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে একাধিকবার। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন রকম সুরহা পাননি তাঁরা।

হলটির ডাইনিংয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রান্নার ঘরের শোচনীয় অবস্থা। অপরিষ্কার পাত্রগুলো এখানে সেখানে পড়ে আছে, তার পাশেই কাটা হচ্ছে সবজি, মাছ, মাংস, মশলার পাত্র খোলা পড়ে আছে একপাশে।

খাবার রাখার আলমিরার অবস্থা আরও নাজুক। আলমিরার সামনের দরজা ভাঙা, ভাঙা দরজার ভিতরে রান্না মাছ, মাংস সবজি তরকারি খোলা অবস্থায় রাখা, ভাতের ডেকও খোলা অবস্থায় রেখে পরিবেশন করা হচ্ছে। মশা-মাছি খোলা খাবারের উপরে পড়ছে হরহামেশাই।

খাবার রাখার ঘরের পাশেই খোলা দরজার ওয়াশরুম। খোলা ওয়াশরুমের পাশেই রাখা হয়েছে খাবার। ডাইনিংয়ের প্লেটগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। অধিকাংশ মেলামাইনের প্লেটগুলো ফাঁটা।

ডাইনিংয়ে খেতে আসা ১০ থেকে ১৫জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তাঁরা জানান, কখনো মাংস থেকে আবার কখনো ডাল থেকে মাছের গন্ধ আসে। যে তেল দিয়ে মাছ ভাজা হয় ঐ তেল দিয়েই আবার এসব তরকারি রান্না করা হয়। তাই এসব খাবার খাওয়া যায় না। ডাইনিং অপরিষ্কার যার কারণে ডাইনিংয়ে বসে খাবার খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ডাইনিংয়ের বেসিনগুলো অপরিষ্কার। নিয়মিত সাবানও দেওয়া হয় না বেসিনগুলোতে।

শেরে বাংলা হলের ৪০১৪ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো যে এ হলে খবারের মান ও পরিবেশনের ব্যবস্থা খুবই নিম্নমানের। বাসি খাবার পরবর্তী খাবারের সাথে মিক্স করে পরিবেশন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ভোলা রোডের বিভিন্ন হোটেলে খাবার খেতে হয়৷ এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। এখন দায়সারা বক্তব্য শুনতে শুনতে আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

এই বিষয়ে ডাইনিংয়ের পরিচালক বিল্লালের সাথে কথা হলে তিনি বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, “এখন রান্নার কাজ চলছে তাই পাত্রগুলো এলোমেলো রাখা। আমরা নিয়মিত রান্নার পরে পাত্র পরিষ্কার করি। আর এই খাবার আমিসহ আমার কর্মচারীরা খায়। আমরা চেষ্টা করছি ভালোভাবে রান্নার জন্য।

তিনি হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, আমি একাধিকবার বলেছি খাবারের একটা নতুন আলমারি দিতে আর ওয়াশরুমের দরজাটা লাগিয়ে দিতে কিন্তু একবছরেও তা দেয়নি। ক্যান্টিনের পিছনের দুটি লাইটই নষ্ট গেটটাও আটকানো যায় না। এসব নিয়ে বার বার বলেও কোন সুরহা পয়নি।

তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ের প্লেট, গ্লাস জগ নিজেদের কক্ষে নিয়ে গেলেও তা আর ফেরত দেয় না। স্টিলের প্লেট ছিল ১৩০পিস এখন আছে ৬০পিসের মত।

খোলা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে স্বাস্থ্যের উপর কেমন ধরনের প্রভাব পড়ে এমন প্রশ্নে ববি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র ডা. মো. তানজিন বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, “খাবার প্রথমত কোনভাবেই খোলা রাখা উচিত নয় এতে মশা মাছি বসে খাবারে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে পেটের পীড়া ডায়রিয়াসহ নানারকম রোগের সৃষ্টি হতে পারে।”

ডাইনিংয়ের অব্যবস্থাপনা ও সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে হলের সেকশন অফিসার মো. জসীম উদ্দিন বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নতুন প্লেট দেওয়ার আর ভাঙ্গাগেট ও আলমারির বিষয়টা আমরা অবগত আছি আশা করছি অতিদ্রুত এগুলো সংস্কার করা হবে।

এক বছরেও কেন বিষয়গুলো সংস্কার করা হয়নি এমন প্রশ্নে বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে একটা বিষয়ের ফাইল পাশ হতে বিল হতে দেরি হয়। বিল পাশ হলেই আমরা সব ঠিক করে দিব।’

এ বিষয়ে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, বর্তমান বাজার দরে ক্যান্টিনে যে দামে খাবার সরবরাহ করা হয় তা খুবই কঠিন৷ তারপরও খাবারের মান নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই সন্তুষ্ট বলে আমি মনে করি। আমি ডাইনিং পরিচালকদের ভালোভাবে বলে দিয়েছি তারা যেন পরিষ্কার পরিছন্নতা বজার রাখে। আমি নিজেও হলের রান্নার ঘর, খাবার রাখার জায়গা এগুলো পরিদর্শন করি। কোনরকম অসংগতি দেখলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তাছাড়া হলে সপ্তাহের ৩-৪দিন দুপুরের খাবার খাওয়া পড়ে আমার। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের নানারকম সীমাবদ্ধতা আছে তারপরও আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে সার্বিক বিষয় গুলো দেখার চেষ্টা করছি।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ