24 C
আবহাওয়া
১২:২২ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ঢাবির ফুটপাত যেন গণশৌচাগার

ঢাবির ফুটপাত যেন গণশৌচাগার


।। মোছাদ্দেক মওলা।।

বিএনএ, ঢাবি: শফিকুর রহমান একজন রিকশাচালক। দৈনিক ১২০ টাকা ভাড়া দিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মহাজনের রিকশা চালান। তার ভাষ্য মতে দিন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। খাবার-দাবারের পাশাপাশি মলমূত্র ত্যাগ কোথায় করেন জিজ্ঞেস করলে ইতস্তত বোধ করেন তিনি। বলেন, মল ত্যাগের জন্য কোথাও না কোথাও যেতে হয়, তবে মূত্র ত্যাগের জন্য ওইভাবে সুযোগ হয় না কোথাও যাওয়ার। তাই ক্যাম্পাসের নিরিবিলি জায়গা দেখে ফুটপাতেই কাজ সারেন।

শুধু শফিকুর রহমান নয়, এরকম আরও অনেক রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা ও বহিরাগতদের নিয়মিত মলমূত্র ত্যাগের স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাত। এ নিয়ে দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করেন এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার এ সমস্যার সমাধান করতে ‌অপারগ প্রমাণিত হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে উদ্বাস্তুদের পুরোপুরি কন্ট্রোলে রাখা সম্ভব নয়। তারা যেখানেই থাকে সেখানে এসব সমস্যা হয়। প্রশাসন নজরদারিতে রেখে বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।

মলমূত্র ত্যাগের হটস্পট:
সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলত ৮ টি জায়গায় সবচেয়ে বেশি অবাধে মলমূত্র ত্যাগ করা হয়। সেগুলো হল- রোকেয়া হল সংলগ্ন যাত্রী ছাউনি, শেখ রাসেল টাওয়ারের বিপরীতে জগন্নাথ হল দেয়াল সংলগ্ন ফুটপাত, মল চত্বরের বাগান, বাংলা একাডেমি সংলগ্ন মেট্রোরেল স্টেশনের নিচের চলাচলের পথ, মধুর ক্যান্টিন সংলগ্ন কলাভবনের পেছনের দেয়াল, ফুলার রোডের শিক্ষক কোয়ার্টার সংলগ্ন ফুটপাত, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও বুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল সংলগ্ন ফুটপাত এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন ফুটপাত।

এই স্থানগুলোতে সবচেয়ে চললেও পাশাপাশি ফুটপাতের বিভিন্ন জায়গায় উদ্বাস্তু ও পাগল ঘুমায়। সুযোগ পেলেই মানুষজন মলমূত্র ত্যাগ করেন। এছাড়াও স্থানগুলোতে বহিরাগত নিয়ে নিরাপত্তাজনিত নানা সমস্যা ও অপরাধ সংঘটিত হয়।

কারা দায়ী:
অবাধে মলমূত্র ত্যাগ ও পরিবেশ দূষণের জন্য বহিরাগত ও উদ্বাস্তুদের দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আরবি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম নাঈম বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)কে বলেন, রোকেয়া হলের দেয়াল সংলগ্ন যাত্রী ছাউনিতে কিছু উদ্বাস্তু থাকে। কয়েকটা পরিবার একসাথে ওখানে রাতে ঘুমায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভবনের ওয়াশরুম ওরা ব্যবহার করতে পারে না। যার কারণে তারা ছাউনির পাশেই ফুটপাতে গাছের গোড়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।

জায়গাটা সার্বক্ষণিক স্যাঁতসেতে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফুটপাতের উপর দিয়ে হাঁটা যায় না। রাস্তা দিয়ে নেমে ঘুরে যেতে হয়। এত দুর্গন্ধযুক্ত ফুটপাত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হতে পারে না।

তার একটু পরে শহীদ মিনারের দিকে যেতে পড়ে শেখ রাসেল টাওয়ার। টাওয়ারের উল্টোপাশের ফুটপাত পুরোটাই সবসময় ভেজা থাকে প্রস্রাবে। ওখানে একটি সরকারি পোর্টেবল গণ প্রস্রাবখানা (গপ্র) আছে। যেটি দুইজনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। তবে সেটি ব্যবহার করে না কেউ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রস্রাবখানার বাইরে ফুটপাতেই কাজ সারছেন সবাই। একজনকে ডেকে কারণ জিজ্ঞেস করেন এই প্রতিবেদক। জবাবে তিনি বলেন, প্রস্রাবখানা তো ডুবে গেছে, ওখানে আর ঢোকা যায় না। তাই বাইরেই করতে হচ্ছে। কী করব!

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মাস্টার্সের আবাসিক শিক্ষার্থী রোকন উদ্দীন বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)কে বলেন, এই ক্যাম্পাসে আছি আজকে ৬ বছর। সবসময়ই এই পরিবেশ দূষণ দেখে আসছি। আমার হলের বাউন্ডারির ফুটপাতে কখনোই হাঁটা যায় না দুর্গন্ধের কারণে। প্রশাসন চাইলে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু তারা কেন করে না আমি জানি না। দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠের এই দশা কখনোই মেনে নেয়া যায় না।

এভাবে বাকি স্থানগুলোতেও ভোগান্তির শিকার হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিরাগতদের চেয়েও বেশি দায়ী এমন পরিবেশের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভিত্তিক বিভিন্ন সমগঠনের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা প্রত্যেকেই নানা ধরণের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই বিশ্বের উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠানের মতো এখানের পরিবেশ ঠিক রাখতে পারেন বলে জানান তারা।

ফুটপাতে মলমূত্র ত্যাগ ও পরিবেশ দূষণের সমাধান কী হতে পারে জানতে চাইলে তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত হওয়াতে যদি সমস্যাই হয় তা হলে গণশৌচাগার তৈরি করা যেতে পারে। রাস্তায় অনেক মানুষ থাকে। অনেক প্রাক্তনও ক্যাম্পাসে আসে। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে না। গণশৌচাগার থাকলে এবং যথেষ্ঠ সচেতনতা সৃষ্টি করলে এটির সমাধান অবশ্যই সম্ভব।

কী বলছে প্রশাসন:
সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির (বিএনএ) সাথে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ‌অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর। সমস্যার কারণ হিসেবে তিনি উন্মুক্ত ক্যাম্পাসের কথা বলেন। প্রক্টর বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত হওয়ায় অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা চাইলেও সবাইকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তাছাড়া করোনার সময়ও অনেক মানুষের নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা অনেক লোককে খাওয়ায়, সাহায্য করে। তখন থেকেই অনেক মানুষ এখানে থাকে। তারাই আসলে এসব কাজ করে থাকে।

গণশৌচাগারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণশৌচাগার বানানো তো আমাদের কাজ না। আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী যে স্থাপনাগুলো হবে সেগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সবরকমের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু উদ্বাস্তুদের বিষয়টা এর ভেতর নেই। তারা যেখানেই থাকবে, সেখানেই এসব করে। প্রক্টরিয়াল টিম, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সজাগ থাকে। অভিযান চালিয়ে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হয়, অপরাধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সচেতন আছি।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ