35 C
আবহাওয়া
১২:৪৬ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের প্রশংসা করলেন রাষ্ট্রপতি

মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের প্রশংসা করলেন রাষ্ট্রপতি

মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন।

বিএনএ: স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করায় বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বলেন, সরকার সফলতার সঙ্গে করোনা মহামারী মোকাবিলা করলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অগ্রযাত্রা কিছুটা হলেও শ্লথ করেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে ভাষণে একথা বলেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধান অনুযায়ী, বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিয়ে থাকেন। সে অনুযায়ী, অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভাষণ দেন।

ভাষণের শুরুতেই সবাইকে ইংরেজি নববর্ষ ২০২৩ এর শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার পরও মাথাপিছু আয়, রফতানি বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বংলাদেশের অগ্রগতি সাফল্যমণ্ডিত।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠায় আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলা’ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ মেট্রোরেল চালু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, করোনা মোকাবিলা, বাস্তুুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গতিশীল এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতি সংসদকে জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক দুই-পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বলেন, আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলারে।

আবদুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক এক-চার লক্ষ মেট্রিক টন, যা সন্তোষজনক। বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সরকার ৬০ বছরের উর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিট ভর্তি হার ৯০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ দশমিক চার-দুই শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ‘ঝরে পড়ার হার’ ৪৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৪ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর এক আদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

রাষ্ট্রপতি অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। সরকারের কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী,সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়ার কথা বলেন আবদুল হামিদ।

শুরুতেই রাষ্ট্রপতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের। স্মরণ করেন, সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জাতীয় চার নেতা এবং গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের। এরপর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। সবশেষে জাতীয় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া সংসদের ২১তম অধিবেশন রাষ্ট্রপতির কাছে অন্যরকম গুরুত্ব বহন করে। এই অধিবেশনের ভাষণই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের শেষ ভাষণ। কারণ সংবিধান অনুযায়ী তার রাষ্ট্রপতি থাকার মেয়াদ প্রায় শেষ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম মেয়াদে শপথ নেন। পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি।

বিএনএ/এ আর

Loading


শিরোনাম বিএনএ