33 C
আবহাওয়া
৫:৩৭ অপরাহ্ণ - মার্চ ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮২ (ঝিনাইদহ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮২ (ঝিনাইদহ-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঝিনাইদহ-২ আসনের হালচাল।

ঝিনাইদহ-২ আসন 

ঝিনাইদহ-২ এই আসনটি হরিণাকুন্ডু উপজেলা এবং সদর উপজেলার সাধুহাটি, পোড়াহাটি, মধুহাটি, দোগাছি, সুরাট, সাগান্না, হলিধানী, কালীচরণপুর, কামড়াবাড়িয়া, হরিশংকরপুর, পাগলাকানাই ও পদ্মকর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮২ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মশিউর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৭ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির মশিউর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মতিয়ার রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৯ শত ২৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মশিউর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় 

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে বিএনপির মশিউর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মশিউর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ১ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫ হাজার ২ শত ৮২ জন। নির্বাচনে বিএনপির মশিউর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৯ শত ৬৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরে আলম সিদ্দিকী । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৩ শত ৫৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মশিউর রহমান বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫ শত ৪৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ২ শত ১৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির মশিউর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরে আলম সিদ্দিকী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৭ হাজার ৭ শত ৬ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৪ হাজার ২৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯ শত ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মশিউর রহমান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪১ হাজার ৪ শত ২৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: তাহজীব আলম সিদ্দিকী বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫ শত ৬১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৬ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা, বীরমুক্তিযোদ্ধা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকীর সন্তান তাহজীব আলম সিদ্দিকী বিজয়ী হন। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৯ শত ৮৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ২ শত ৪৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: তাহজীব আলম সিদ্দিকী বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫ শত ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৪১ হাজার ৮৫ জন।

একাদশ জাতীয় সংসদে ঝিনাইদহ-২ আসেন প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। দশম জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান। বিএনপির আব্দুল মজিদ মনোনয়ন পত্র দাখিল করলে তার মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের তাহজীব আলম সিদ্দিকী, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফখরুল ইসলাম, মই প্রতীকে বাসদের আসসাদুল ইসলাম, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আবু তালেব সেলিম, প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তাহজীব আলম সিদ্দিকী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮ শত ৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফখরুল ইসলাম। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৯ হাজার ২ শত ৯৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-২ সংসদীয় আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, দশম সংসদে স্বতন্ত্র এবং নবম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঝিনাইদহ-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৯৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩.৫৯%, বিএনপি ৪৭.২৮%, জাতীয় পার্টি ৪.৯২%, জামায়াতে ইসলামী ২১.১৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.০৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৪৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.৭৮%, বিএনপি ৪০.৯০%, জাতীয় পাটি ৪.১০%, জামায়াতে ইসলামী ২০.০৯ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১৩% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.২১%, ৪দলীয় জোট ৫৪.৪৫%, জাতীয় পার্টি ১.২২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৮৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫১.৩৯%, ৪ দলীয় জোট ৪৬.৮২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১.৭৯% ভোট পায়।

বর্তমানে ঝিনাইদহ-২ আসনে সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ, সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মশিউর রহমানের ছেলে ডা. ইব্রাহীম রহমান রুমি, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সভাপতি রাশেদ মজুমদার ও সহসভাপতি মেজর (অব.) মাহফুজুর রহমান।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ- ২ সংসদীয় আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ ছিল। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই আসনটি এ পর্যন্ত টানা বিএনপির মশিউর রহমানের একক নিয়ন্ত্রণে ছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ৪ বারের সংসদ সদস্য মশিউর রহমানকে পরাজিত করে বিএনপির দূর্গ দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। কিন্তু ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলামকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী তাহজীব আলম সিদ্দিকী।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে অন্তকোন্দল। আগামী নির্বাচনে তা প্রভাব ফেলবে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। বিএনপি চাইবে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে দলীয় ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮২তম ঝিনাইদহ- ২ সংসদীয় আসনটিতে বিএনপি -আওয়ামী লীগ হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ