18 C
আবহাওয়া
৬:১৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ২০২১ সালে  হারিয়েছি যাদের

২০২১ সালে  হারিয়েছি যাদের

২০২১ সালে  হারিয়েছি যাদের

।। ওসমান গনী ।।

আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে হারিয়েছি অনেক কীর্তিমানকে। না ফেরার দেশে চলে গেছেন  কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিসম্ভার রেখে। রাজনীতি, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই আমরা হারিয়েছি। করোনা আক্রান্ত  হয়ে এবং বিভিন্ন রোগে অনেকেই মারা গেছেন ।

 রাবেয়া খাতুন: বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন । রাবেয়া খাতুন এর জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে তাঁর মামার বাড়িতে। অবশ্য তার বাবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। রাবেয়া খাতুন লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা। তাঁর লেখা থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক। পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলের মুসলিম নারীদের জীবন যখন নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দী, তেমন সময়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন একজন লেখক হিসেবে। কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন একসময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন।

 মিজানুর রহমান খান :প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান ১১ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন ।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৫৩ বছর। মিজানুর রহমান খান প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন দেখা দিয়েছিল তার।

মুজিবুর রহমান দিলু : ১৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিনেতা, সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু।  অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম চট্টগ্রামে ১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর। পেশাগত জীবনে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। দিলুর অভিনয়জীবন শুরু মঞ্চনাটক দিয়ে। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৭৬ সাল থেকে টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন।

এ টি এম শামসুজ্জামান : বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন।  এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালে।এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

সৈয়দ আবুল মকসুদ : ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। সৈয়দ আবুল মকসুদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—কবিতা: বিকেলবেলা, দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা; প্রবন্ধ: যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা, বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু প্রভৃতি; জীবনী: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, গোবিন্দচন্দ্র দাসের ঘর-গেরস্থালি; ভ্রমণকাহিনি: জার্মানির জার্নাল, পারস্যের পত্রাবলি। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ঋষিজ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

 ইব্রাহিম খালেদ : ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিশিষ্ট ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়।

মুশতাক আহমেদ: ২৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) রাতে। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশের পুলিশ জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে ঢাকার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। তাদের বিরুদ্ধে “ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো”, “জাতির জনকের প্রতিকৃতি”, “জাতীয় সংগীত” এবং “জাতীয় পতাকাকে” অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।

এইচ টি ইমাম : ৩ মার্চ মৃত্যুবরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। এইচ টি ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে। পুরো নাম হোসেন তৌফিক হলেও পরে তিনি এইচ টি ইমাম নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জেলায়। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এইচ টি ইমাম। আর ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। এরপরর রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। তখন তিনি বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।

আতিক উল্লাহ খান মাসুদ : ২২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেছেন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক এবং গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

 আসলামুল হক: ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক।আসলামুল হকের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ মে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। আসলামুল হক ঢাকা-১৪ আসন থেকে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

 হাসান শাহরিয়ার: ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার। হাসান শাহরিয়ার দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক ‘সানে’র সম্পাদক এবং পাকিস্তানের দৈনিক ডন পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী ‘নিউজ উইক‘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কাজ করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি এবং বৈদেশিক সাংবাদিক সংস্থা ওকাবের সভাপতি ছিলেন।

মিতা হক: ১১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও শুদ্ধ সংগীত চর্চার অন্যতম পুরোধা মিতা হক। তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন মিতা হক। ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন মিতা হক। তারও আগে ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন।

আবদুল মতিন খসরু: ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। মতিন খসরু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি। কুমিল্লা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
মতিন খসরু ১৯৫০ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

শামসুজ্জামান খান:  বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ১৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন।  মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান একাধারে ছিলেন লোক সংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খন্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খন্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা।

কবরী : ১৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত নায়িকা সারাহ বেগম কবরী। ৭১ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুসেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।
১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সারাহ বেগম কবরীর। দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবার প্রিয়মুখ কবরী অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ছবির প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেন। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 ওয়াসিম: ১৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন চিত্রনায়ক ওয়াসিম। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন ওয়াসিম। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ছবির সফল অভিনেতা ছিলেন ওয়াসিম। মোহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ওয়াসিমের। প্রথম ছবিটিই ব্যবসাসফল হয়। এরপর আর পিছু তাকাতে হয়নি ওয়াসিমকে। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে থাকেন। সবমিলিয়ে ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন ওয়াসিম।

তারেক শামসুর রেহমান: ১৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও কলামনিস্ট অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান।আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে গবেষণামূলক বেশ ক’টি গ্রন্থ রয়েছে তার। এছাড়া তুলনামূলক রাজনীতি নিয়েও তার বই রয়েছে।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : ২৪ মে মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। হাবীবুল্লাহ সিরাজীর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। ক্যানসারে আক্রান্ত হাবীবুল্লাহ সিরাজীকে গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পেশাগত জীবনে প্রকৌশলী হাবীবুল্লাহ সিরাজী লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি একাধারে কবিতা, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্য লিখেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

ফজল এ খোদা : ৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেছেন বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ফজল এ খোদা। ৮১ বছর বয়সী এই গীতিকার করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে।  ১৯৬৩ সালে বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে তালিকাভুক্ত হন টেলিভিশনে।

গোলাম মুস্তাফা : ৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী গোলাম মুস্তাফা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৮০ বছর। গোলাম মুস্তাফা একমাত্র বাংলাদেশি ক্যামেরাম্যান হিসেবে ১৯৬৩ সালে ডিআইটি ভবনে অবস্থিত তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনের যোগদান করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ডাইরেক্টর অব ফটোগ্রাফি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অরুণ দাশগুপ্ত: ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেছেন কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত (৮৬)। বার্ধক্যজনিত কারণে চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে নিজ বাড়িতে পরলোকগমন করেন। দৈনিক আজাদীর এই সহযোগী সম্পাদক জীবনসায়াহ্নে এসে গ্রামেই দিন কাটাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন অকৃতদার। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সারাজীবন অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন অরুণ দাশগুপ্ত। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি।

 ফকির আলমগীর : ২৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশবরেণ্য গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। এ গণসংগীতশিল্পীর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফকির আলমগীর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কেন্দ্রে যোগ দেন তিনি।

জুনায়েদ বাবুনগরী : ১৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির এবং হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক ও শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ৬৭ বছর বয়সি বাবুনগরী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

 বুলবুল চৌধুরী: ২৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেছেন কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী।  ষাটের দশকে আবির্ভূত সৃজনশীল কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী কথাসাহিত্যে একেবারে নতুন আদলের সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রবেশ করেন বাউল স্বভাবী বলে পরিচিত গুণী কথাকার বুলবুল চৌধুরী। তার প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘টুকা কাহিনী’।

শেখ আবদুল হাকিম: ২৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক শেখ আবদুল হাকিম। সেবা প্রকাশনীর একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। তার অনুবাদ করা বিদেশি গল্প ও উপন্যাস ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ‘মাসুদ রানার’ জনক কাজী আনোয়ার হোসেন হলেও পরবর্তী সময়ে এই সিরিজে বেশ কিছু পর্ব লিখেছেন শেখ আবদুল হাকিম। এছাড়াও সেবা প্রকাশনী আরেকটি জনপ্রিয় সিরিজ ‘কুয়াশা’। পাশাপাশি অ্যাডভেঞ্চার, হরর ও রোমান্টিকসহ নানা স্বাদের বই তিনি উপহার দিয়েছেন।

বশীর আল-হেলাল: ৩১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেছেন কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, গবেষক, বাংলা একাডেমির ফেলো ও সাবেক পরিচালক বশীর আল-হেলাল। বশীর আল-হেলালের জন্ম ১৯৩৬ সালের ৬ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামের মীর পাড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতি ও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে।

জিয়াউদ্দিন বাবলু: ২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী ও ডাকসুর সাবেক জিএস জিয়াউদ্দিন আহমেদ। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বাবুল দুই দফায় জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

হারুন অর রশীদ: ৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন দেশের প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশীদ। পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯১ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

রফিকুল ইসলাম দাদুভাই: ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার, শিশু সংগঠক ও নাট্যকার রফিকুল হক দাদুভাই। রফিকুল হকের জন্ম ১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের কামালকাচনায়।

ড. ইনামুল হক: ১১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন দেশবরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক।
ইনামুল হক ২৯ মে জন্ম ফেনীর এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

মাহমুদ সাজ্জাদ: ২১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেছেন দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদ। একাধারে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন মাহমুদ সাজ্জাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’, খান আতাউর রহমানের ‘ঝড়ের পাখি’, ‘আপন পর’’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সাজ্জাদ। কলেজ জীবন থেকেই মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত অভিনয় করেছেন টিভি নাটকেও। তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল সন্ধ্যা’।

 হাসান আজিজুল হক: ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখি করে গেছেন। তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

 রফিকুল ইসলাম: ৩০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।

রিয়াজউদ্দিন আহমেদ : ২৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এবং দ্য নিউজ টুডে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। রিয়াজউদ্দিন আহমেদের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।বাংলাদেশে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যারা মূখ্য ভূমিকা পালন করেন রিয়াজউদ্দিন ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।  সাংবাদিকতায় গৌরবময় অবদানের জন্য রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ১৯৯৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

জয়নাল আবেদীন হাজারী: ২৭ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী।

বিএনএ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ