21 C
আবহাওয়া
৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেমন ছিলো ২০২১ সালের আদালত পাড়া (শেষ পর্ব)

কেমন ছিলো ২০২১ সালের আদালত পাড়া (শেষ পর্ব)

১০০ টাকা আত্মসাৎ, ব্যাংক কর্মকর্তার ২ বছর কারাদণ্ড

।।সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।।

২০২১ সালে আদালতপাড়া সরগরম ছিল সেলিব্রিটিদের নিয়ে।কখনও সিনেমার নায়িকা আবার কখনও ধর্মীয় বক্তাদের নিয়ে ছিলো আদালত পাড়ায় ব্যস্ততা।তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও বিচার কাজে সবার ছিলো বিশেষ দৃষ্টি।আজ দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে থাকছে তেমনই কিছু আলোচিত মামলা।

আলোচিত মামলা গুলোর মধ্যে বছরের মাঝামাঝি চিত্রনায়িকা পরীমনির মামলাটি ছিল সবচেয়ে আলোচিত। অন্যদিকে, নাশকতা ও বিতর্কিত বক্তব্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শীর্ষ কয়েকজন আলেমকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন—কাজী ইব্রাহিম, মামুনুল হক, আমির হামজা ও রফিকুল ইসলাম মাদানী। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার মামলাগুলোও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পরীমনিকে নিয়ে ঘটনা শুরু জুন মাসে। রাজধানীর কাছে বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ জুন সাভার থানায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন, তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পরীমনি। মামলার পর অভিযানে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজনকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক করে ডিবি। পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় নাসির উদ্দিন, অমিসহ ও শহিদুল আলমকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল কর সাভার থানা পুলিশ।

এ ঘটনার এক মাস ২০ দিন পর ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর সড়কে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। বনানী থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় পরীমনিসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। আগামী ২ জানুয়ারি মামলাটির চার্জ শুনানির নতুন তারিখ ধার্য আছে। এ দুই মামলায় অনেক বার আদালতে আসা-যাওয়া করেন পরীমনি। তাকে দেখতে আদালতে ভিড় জমাতেন সাধারণ মানুষ। বাড়াতে হতো নিরাপত্তাও।

৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বনানীতে অভিনেতা ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। বাসা থেকে মাদক জব্দ করা হয়। রাজের বিরুদ্ধে মাদক ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়। মাদক মামলায় রাজ ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশ।

১ আগস্ট রাতে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গুলশান, ভাটারা, খিলক্ষেত থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। কলেজছাত্রী মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার মামলাতেও পিয়াসাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় তাকে কয়েক দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

একই দিন (১ আগস্ট) রাতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মডেল মৌয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে মদ, ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাকে কয়েক দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।

প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় এক প্রবাসীর দায়ের করা মামলায় ১১ মার্চ চিত্রনায়িকা রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। পরে ওই প্রবাসীর সঙ্গে আপস হওয়ায় জামিন পান তিনি।

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি থেকে বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীরের গ্রেপ্তার নিয়েও বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ২৯ জুলাই রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর তার বিরুদ্ধে গুলশান থানা দুটি এবং পল্লবী থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সবগুলো মামলায় জামিন পেয়ে প্রায় চার মাস পর ২৪ নভেম্বর কারামুক্ত হন হেলেনা জাহাঙ্গীর।

২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্তরে সহিংসতার মামলায় চলতি বছরে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আদের মধ্যে আছেন—আজিজুল হক ইসলামবাদী, জুনায়েদ আল হাবীব, মামুনুল হক প্রমুখ।

গত ২৪ মে গ্রেপ্তার করা হয় আলোচিত ইসলামী বক্তা মুফতি আমির হামজাকে। তাকেও রিমান্ডে নেয় পুলিশ। আমির হামজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। ‘শিশু বক্তা‘ রফিকুল ইসলাম মাদানীকেও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

গত ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ নয়জন। তাদের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

চলতি বছর কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। গ্রাহকদের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা এক মামলায় ১৭ আগস্ট ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। তাদের দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় আরও কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। তাদের মধ্যে আছেন ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রাসেলের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযান শেষে বিকেলে ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা হয়। বর্তমানে এ দম্পতি কারাগারে আছে।

যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাসহ চারটি মামলায় বিচার শুরু হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানেরও বিচার শুরু হয়েছে। বিচার শুরু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ নয়জনের। ক্যাসিনোকাণ্ডে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন এবং তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার সোমার বিচার শুরু হয়েছে।

ডিভোর্স না হওয়া সত্বেও অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মির আগের স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শেখ মো. মিজানুর রহমান ক্রিকেটার নাসির হোসেন, তাম্মি ও তার মা সুমি আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ৩১ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তারা।

বিএনএ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ