বিএনএ,ডেস্ক: বিদায়ী ২০২০ সালে দেশের রাজনীতি করোনার প্রভাবমুক্ত ছিল না। বছরটিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এবং এর কর্মকান্ড ছিল উত্তাপহীন ও ডিজিটাল মাধ্যম নির্ভর। রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনভাবেই মানুষকে প্রভাবিত করেনি।
এর কারণ ছিল করোনার মহামারি। এর মধ্যে অবশ্য ভোটারদের অতি নগন্য উপস্থিতির মধ্যে কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।আর বছরের শেষ দিকে এসে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নির্বাচন কমিশনের আর্থিক অনিয়ম তদন্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানান। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ কামনা করে দেয়া বিবৃতিসহ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে কিছুটা উত্তাপ লক্ষ্য করা গেছে।
ক্ষমতাসীন দলের মধ্যম ও নিচের সারির কয়েক নেতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির দুর্নীতির বিষয় উদঘাটন এবং সামনে চলে আসাও ছিল বছরের আলোচনার বিষয়। সব মিলিয়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় বিদায়ী বছরের রাজনীতি ছিল ভিন্নমাত্রার।
দেশের রাজনীতির মাঠ ২০১৯ সালে ছিল নিস্তরঙ্গ; তা পেরিয়ে ২০২০ সালের শুরুতেই দেখা দেয় করোনা মহামারি। আর তাতে জীবন বাঁচাতে ঘরে ঢুকে যায় রাজনীতি। মিছিল, সমাবেশ, হাত মেলানোর মতো জনসংযোগের চেনা দৃশ্যগুলো উধাও ছিল। মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মহামারির বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর তৈরি করা হয় অবরুদ্ধ অবস্থা, যে কোনো সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে ।
ওই সময়টাতে ঘরে থেকে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। তবে সঙ্কটে পড়া মানুষের সহায়তায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের তৎপরতা ছিল।রাজপথ ছেড়ে ভার্চুয়াল জগতেই বেশি সময় কাটাতে নেতাদের দেখা গেছে।
অন্য সব নির্বাচন বন্ধ থাকলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণ দেখিয়ে মহামারিকালেও সংসদের কয়েকটি আসনের উপনির্বাচন করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটারদের তেমন সাড়া দেখা যায়নি। বড় দলগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হন। আর বরাবরের মতোই কারচুপির অভিযোগ তোলে বিএনপি।
বছরের মাঝামাঝিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর বাম দলগুলো সোচ্চার হয়েছিল, তবে তা মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধনেই সীমিত ছিল। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বাম দলগুলো, তবে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পর সেই আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে আসে।
জুন মাসে অবরুদ্ধ অবস্থার বিধি-নিষেধ শিথিল হলে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়তে থাকলেও সেই চেনা দৃশ্যে ফেরেনি। মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলের তৎপরতা ঘরোয়া সভা, এর বাইরে কয়েকটি মানববন্ধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।ঘরোয়া তৎপরতার মধ্যেও দুই রাজনৈতিক দল গণফোরাম ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডিতে ভাঙন ধরেছে। হেফাজতেও বাজছে ভাঙনের সুর।
বেশ কয়েক বছর পর হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ইসলামী দলগুলো হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কার্টুন প্রকাশ নিয়ে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভে নেমে রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছিল।তা থেমে যাওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলে বছরের শেষ ভাগে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করে হেফাজত।সংগঠনটির নেতা মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা এবং ভাঙার ঘোষণা দিলে দেশজুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। আলোচিত হয় ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্যমূলক তৎপরতার বিষয়টি। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
শীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকে কবে ফিরবে, তা নিয়ে সংশয় এখনও কাটেনি।অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে দল পরিচালনার চিরচেনা কৌশল বদলে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কারণ করোনা রাজনীতির চালচিত্র পাল্টে দিয়েছে। অনেক কিছু নতুন করে ভাবনার সুযোগ করে দিয়েছে। কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন চলতে হবে তার শিক্ষা দিয়েছে। কীভাবে রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল বা সংগঠন পরিচালনা করতে হবে তার কর্মকৌশলও চিন্তা করতে হবে।সবমিলিয়ে বিদায়ী বছরের রাজনীতি ছিল নিরুত্তাপ এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডবিহীন স্থবিরতার একটি বছর।
বিএনএনিউজ/আরকেসি