28 C
আবহাওয়া
৭:২৬ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » জেনে নিন আয়াতুল কুরসির যত ফজিলত

জেনে নিন আয়াতুল কুরসির যত ফজিলত

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ আয়াতুল কুরসি আরবি আয়াতুল কুরসি PDF আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত আয়াতুল কুরসি পিকচার আয়াতুল কুরসি আরবি ও বাংলা উচ্চারণ আয়াতুল কুরসি অডিও আয়াতুল কুরসি HD Photo

ইসলাম ডেস্ক:  আয়াতুল কুরসির ফজিলত: জানুন এর বিশেষত্ব

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যা আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত, এটি কোরআনের অন্যতম প্রসিদ্ধ আয়াত। এই আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা এবং গুণের বিশদ বিবরণ রয়েছে, যা এর ফজিলতকে বিশেষভাবে বৃদ্ধি করে। আয়াতটি পাঠ করলে অসংখ্য পুণ্য লাভের সুযোগ থাকে।

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না।”

আয়াতুল কুরসি মোট ৯টি বাক্য নিয়ে গঠিত। প্রথম বাক্যের সঙ্গে নবম বাক্যের মিল রয়েছে:
– প্রথম বাক্যে বলা হয়েছে, “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত এবং সবকিছুর ধারক।”
– নবম বাক্যে উল্লেখ আছে, “তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।”

দ্বিতীয় বাক্যের সঙ্গে অষ্টম বাক্যের মিল:
– দ্বিতীয় বাক্যে বলা হয়েছে, “তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়।”
– অষ্টম বাক্যে উল্লেখ আছে, “আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়।”

তৃতীয় বাক্যের সঙ্গে সপ্তম বাক্যের মিল:
– তৃতীয় বাক্যে বলা হয়েছে, “আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর।”
– সপ্তম বাক্যে বলা হয়েছে, “তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে।”

চতুর্থ বাক্যের সঙ্গে ষষ্ঠ বাক্যের মিল:
– চতুর্থ বাক্যে প্রশ্ন করা হয়েছে, “কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?”
– ষষ্ঠ বাক্যে বলা হয়েছে, “তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন।”

আয়াতুল কুরসির ফজিলত হাদিস

মধ্যবর্তী পঞ্চম বাক্য দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, তা আল্লাহ জানেন। এভাবে আয়াতটির প্রতিটি বাক্য অন্য বাক্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত, যা এর অর্থ এবং গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একবার এক ব্যক্তিকে সদকার মাল চুরি করতে দেখেন। তিনি তাকে ধরে বলেন, “আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব।” চোরটি বলল, “আমি খুব অভাবী,” তাই আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দেন। পরদিন রাসুল (সা.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “গতকাল তোমার অপরাধীকে কী করেছ?” তিনি জানান, “আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” রাসুল (সা.) বললেন, “সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে।”

আবু হুরায়রা (রা.) পরদিন আবার চোরকে পাকড়াও করেন। চোর আবারও ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং বলল, “আমি তোমাকে এমন একটি কথা বলব, যা দ্বারা আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন।” তিনি জানতে চান, “কি কথা?” চোর বলেন, “যখন ঘুমাতে যাবে, আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন এবং কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।”

এটি শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাঁকে ছেড়ে দেন। পরদিন রাসুল (সা.) আবার অপরাধী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের ঘটনাটি বলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, “যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী, কিন্তু সে সত্য বলেছে।” রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)–কে বলেন, “তুমি কি জানো সে কে?” তিনি বলেন, “না।” রাসুল (সা.) বললেন, “সে হচ্ছে শয়তান।” [সহিহ বুখারি, নম্বর ২৩১১]

উপরোক্ত দুই ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ।

এ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসীর ফযীলত সংক্রান্ত মোট তিনটি হাদীস উল্লিখিত রয়েছে। এই হাদীসগুলো থেকে প্রতিদিন আটবার এই আয়াত পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যায়। সকালসন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ও ঘুমাবার সময়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ যদি এই মোবারক আয়াতের অর্থমর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সাথে তা পাঠ করে তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত দুনিয়া ও আখেরাতে বরকতের বিষয় হবে।

আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব ও ফজিলত

আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, ইসলামের একটি অমূল্য রত্ন হিসেবে বিবেচিত। এই আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, গুণ ও মর্যাদার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গভীর ধারণা ও প্রেরণার উৎস। এর ফজিলত এতটাই বিশাল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, এটি পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না।

এই আয়াতটির নিয়মিত পাঠ আমাদের জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি নিয়ে আসে। বিশেষ করে রাতে শোয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা শয়তান ও অশুভ শক্তির থেকে আমাদের রক্ষা করে।

এতে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিচয় রয়েছে, যা আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সুতরাং, আয়াতুল কুরসি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য সঙ্গী, যা আমাদের মুমিনের পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর প্রতি আমাদের ভক্তি ও আনুগত্যের নিদর্শন বহন করে।

 

বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন/এইচমুন্নী 

Loading


শিরোনাম বিএনএ