21 C
আবহাওয়া
১২:১১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বরিশালের তিন উপজেলায় ১৫ দিনে ৬ খুন

বরিশালের তিন উপজেলায় ১৫ দিনে ৬ খুন

খুন

বিএনএ, বরিশাল: বরিশালের উজিরপুর, বানারীপাড়া ও মুলাদী উপজেলায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। চলতি আগস্ট মাসেই মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে এ তিন উপজেলায় পর পর ছয়টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যার মধ্যে বানারীপাড়ায় ২টি ও মুলাদীতে ৩টি এবং উজিরপুরে একটি। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ১১ জন। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।

গত বুধবার সকালে উজিরপুর উপজেলার ওটরা গ্রামে মেহেদী হাসান বেপারী নামের এক দিনমজুরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজের দুদিন পর পুলিশ বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাগান থেকে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশের ধারণা, তাকে শ্বাসরোধ ও ভারী কোন বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

পরিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার ও ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড গুলো সংঘটিত হয়। ছয়টি হত্যাকাণ্ডের পরেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করছেন স্ব স্ব থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ‘তিন উপজেলার মধ্যে গত ১৫ আগস্ট প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে বরিশালের মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর চরপদ্মা মাদ্রাসার হাট এলাকায়। এদিন বেলা আড়াইটার দিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রায়হান সরদার (৩২) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে তার আপন চাচা করিম সরদার (৫০) ও চাচাতো ভাই ইয়াছিন সরদার (১৯)। এসময় কুপিয়ে জখম করা হয় নিহতের ভাই ইমরান সরদারকে। নিহত রায়হান উত্তর চরপদ্মা গ্রামের মৃত রহিম সরদারের ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে মুলাদী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি করিম সরদার ও তার ছেলে ইয়াসিনকে গত ২৭ আগস্ট ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

অপরদিকে, গত ২১ আগস্ট বিকেলে বানারীপাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাভা এলাকায় স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করার পর পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে তার স্বামী আব্দুস সালাম। ঘটনার পর পরই অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় নিহত গৃহবধূর নাম কারিমা বেগম (২৬)। তিনি দুই সন্তানের জননী। পরকীয়ায় জড়িত সন্দেহে স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বাড়ির পাশে খালের পানিতে চুবিয়ে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গৃহবধূর মৃতদেহ খালের তীরে লুঙ্গি দিয়ে ঢেকে রাখেন।

এই ঘটনার একদিন পর গত ২২ আগস্ট বরিশালের মুলাদীতে হত্যা মামলার পরোয়ানাভুক্ত দুই সহোদরের নেতৃত্বে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। নিহত আব্দুর রব হাওলাদার (৬৫) উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের চরকমিশনার এলাকার মৃত ধলু হাওলাদারের ছেলে।

স্থানীয় মিরগঞ্জ খেয়াঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে আব্দুর রব হাওলাদারের পরিবারের সাথে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার কামাল সরদার, জামাল সরদার ও ইউপি সদস্য শামীম খানদের সাথে। মিরগঞ্জ খেয়াঘাটটি আব্দুর রব হাওলাদারের মালিকানা জমিতে হলেও সেখানে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে অভিযুক্তরা।

এ নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে ২২ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বাজারে যাওয়ার পথে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে বৃদ্ধ আব্দুর রবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে আব্বাস হাওলাদার বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত তিনজনকে থানা পুলিশ এবং একজনকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। তবে হামলার নেতৃত্ব দেয়া কামাল ও জামাল সরদার এবং শামীম খান আত্মগোপনে রয়েছে।

এছাড়া গত ২৭ আগস্ট ভোর রাতে মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের চর সাহেব রামপুর গ্রামের লক্ষ্মীপুরহাট এলাকায় ডাকাতি করতে ডাকাত দলের হামলায় নিহত হয়েছে বাবু (২৭) নামের এক ডাকাত সদস্য। তাছাড়া ডাকাতের হামলায় আহত হয়েছে একই পরিবারের পাঁচজন।

নিহত ডাকাত সদস্য বাবু বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা। তবে তিনি মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নে নানাবাড়িতে বসবাস করতেন।

গত ২৮ আগস্ট রাত ৩টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলায় পুলিশের টহল ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে চোর সন্দেহে আব্দুস ছালাম বেপারী (৬০) নামের এক ইজিবাইক চালককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই রাতে বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কের চৌয়ারীপাড়া নামক এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত আব্দুস ছালাম বেপারী উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বলহার গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের বেপারীর ছেলে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৮ আগস্ট রাতে নিহতের ছেলে সাব্বির বাদী হয়ে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে সর্বশেষ বুধবার সকালে উজিরপুর উপজেলার ওটরা গ্রামের বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী দিনমজুর মেহেদী হাসান বেপারী (২৩) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি গত সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।

উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামান সুরতহাল রিপোর্টের বরাতে বলেন, ‘মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভারি কোনো বস্তুর আঘাতে তার মুখমণ্ডল সহ শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত অবস্তায় পাওয়া গেছে। গলায় ফাঁসের দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।

বিএনএ/ কাজল, এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ