27 C
আবহাওয়া
৭:৪০ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪০ (জামালপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪০ (জামালপুর-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে জামালপুর-৩ আসনের হালচাল।

জামালপুর-৩ আসন

জামালপুর-৩ সংসদীয় আসনটি মাদারগঞ্জ এবং মেলান্দহ উপজেলা গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৪০তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২২ হাজার ৭ শত ১৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৯ শত ৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খায়রুল বাসার চিশতি। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৩২ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ: বিএনপির আবুল হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আবুল হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৯ শত ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল হাই বাচ্চু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৬ শত ৬৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৬শত ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ২ শত ৫৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮ হাজার ৪ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯ শত ৫০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭১ হাজার ৮ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৯ হাজার ৯৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ২৫ হাজার ১ শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫ শত ৪৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মনজুর আহাদ হেলাল, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির শিবলুল বারী রাজু, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আব্দুল হাকিম শান্তি এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বুরহান উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মির্জা আজম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪ হাজার ৬ শত ৭৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। শুধু মাত্র ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর জামালপুর-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামালপুর-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৪.৬৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.৫২%, বিএনপি ২৫.২৯%, জাতীয় পাটি ৩.১৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৯.০২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.৯১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৯.৭১%, বিএনপি ২৭.৭৪%, জাতীয় পাটি ১৭.৮২%, জামায়াতে ইসলামী ২.৯৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮০% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৩.৯৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.৮৯%, ৪দলীয় জোট ৪.৬১%, জাতীয় পার্টি ০.৪৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪৬.০২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৫১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬২.৯৬ %, ৪দলীয় জোট ৩৬.৩০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৪% ভোট পায়।

জামালপুর-৩ মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ সংসদীয় আসনে, বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। আওয়ামী লীগে মির্জা আজমের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একক প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর সামসুল আলম লিপটন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, জামালপুর জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে জামালাপুর এর সবচেয়ে আলোচিত আসন হলো জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন। নৌকার ঘাঁটি বলে পরিচিত এই আসন থেকে টানা ছয়বার নৌকা প্রতীকে বিজয়ী মির্জা আজম। তাঁর বিপরীতে বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ভোটের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

ছয় বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাট গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র, মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দি ফেরি সার্ভিস, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইলস মিল, গ্যাস ফিল্ড অনুসন্ধান প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তা পাকাকরণ ও সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উন্নয়ন ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি সারাদেশে মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এসব কারণে এই আসনটি এখন ‘মির্জা আজমের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত।

অপর দিকে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। শুধু ব্যক্তি ইমেজ দিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী মির্জা আজমের মতো হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিকে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৪০তম সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগেই বিজয়ী হবে, এটা অনেকটা নিশ্চিত।

বিএনএ/শিরীন, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ