বিএনএ, নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ফারহানুজ্জামান রাকিন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ থেকে তার এই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বলে ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের।
সোমবার (৩১ মে) বেলা ১১টার দিকে রাকিন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। রাকিনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া থানার শ্রীরামপুর গ্রামে। তার বাবা প্রবাসী। মা এবং বোনের সঙ্গে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় থাকতেন রাকিন। তবে তিনি কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন তার পরিবার জানাতে পারেনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে তার সহপাঠী ইফতেখার অনিক ও কাজী তানিম বলেন, গত ৩ মাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সব যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখায় তার সহপাঠীরা যোগাযোগ করতে পারেনি।
জানা যায়, আত্মহত্যার কিছুক্ষণ আগে সে অসুস্থ অনুভব করলে তার মা বাইরে থেকে ডাক্তার নিয়ে আসার জন্য বের হয়। এ সময়ের মধ্যে রাকিন বাথরুমে গিয়ে ডিসের তারের সঙ্গে গলা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এর আগেও সে একবার নিখোঁজ হয়েছিল। তখন বিভিন্ন মাধ্যমে থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা উদ্ধার করেছি। সত্যি যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে তা মর্মান্তিক ও ভীষণ বেদনাদায়ক। আমাদের মেধাবী ছাত্রদের এখন বেঁচে থাকার সময়।
সূত্রে জানা যায়, আপন মা না থাকায় দীর্ঘদিন পারিবারিক নানা সমস্যার সম্মুখীন ছিলেন এই শিক্ষার্থী। তবে ক্যাম্পাস খোলা থাকাকালীন সময়ে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা চলাকালে পরিবারের সাথে যোগাযোগ না রেখে বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে মিশে সময় কাটিয়ে দিতেন। এমনকি গত বছর লকডাউন শিথিল করা হলে নোয়াখালী এসে বহুদিন বন্ধু বান্ধবের সাথে থেকে গেছেন।
সহপাঠিদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সার্বক্ষণিক পরিবারের সঙ্গে থেকে তার ওই সব সমস্যা চরমে পৌঁছে যায়। এজন্য বেশ কিছুদিন ধরে চরম বিষন্নতায়ও ভুগছিলেন। এর মাঝে একবার পরিবার তার নিখোঁজ হওয়ার গুঞ্জন উঠলেও অল্পকিছুদিন পরেই তাকে ফিরে পাওয়া যায়। কিছুদিন যেতেই এবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ফারহানুজ্জামান রাকিন।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি এগ্রিকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী মো: মহসিন বলেন, রাকিনের অসময়ের বিদায় পুরো এগ্রিকালচার বিভাগ পরিবারকে শোকাহত করেছে। পারিবারিক কলোহের জের ধরে রাকিন বেশ কয়েকমাস ধরে বেশ ডিপ্রেশন ভুগছিলো। পরিবার থেকে তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এর আগেও পরিবারের সাথে রাগ করে নোয়াখালী থেকে বেশকিছুদিন নিরুদ্দেশ ছিলো রাকিন। পরর্বতীতে এগ্রিকালচার বিভাগের শিক্ষক – শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরে দেওয়া হয়। পর্বরতীতে রাকিন সকলের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দেয়।
রাকিন ঢাকার মানিকদি নিজ এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম আবর্তনে কৃষি বিভাগে ভর্তি হন। এই মৃত্যুতে তার সহপাঠীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায় থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/শফি,মনির