বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে লালমনিরহাট-৩ আসনের হালচাল।
লালমনিরহাট-৩ আসন
লালমনিরহাট-৩ সংসদীয় আসনটি লালমনিরহাট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৮ নাম্বার আসন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু তালেব মিয়া বিজয়ী হন
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৮ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ৪৪ হাজার ৪ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু তালেব মিয়া বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৪ শত ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর আজিজুল হক। তিনি পান ৯ হাজার ৮শত ১৬ ভোট।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মইনুদ্দিন সরকার বিজয়ী হন
১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-৭ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৯২ হাজার ৭শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ৪৮ হাজার ১ শত ৭০ জন। বিএনপির মইনুদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৬ শত ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১২ হাজার ৩ শত ৮৩ ভোট।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন বিজয়ী
১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৭ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, লালমনির হাট-৩। নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬২ হাজার ৭ শত ৪৩ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন বিজয়ী হন। তিনি পান ২০ হাজার ৯ শত ৩০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুল হাবিব। তিনি পান ২০ হাজার ৯ শত ৭৭ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৮শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার এম ইসহাক। তিনি পান ১৪ হাজার ১ শত ৯৫ ভোট।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া পুনরায় নির্বাচিত
১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-৩ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৪ হাজার ৯ শত ৩৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ ভোলা মিয়া বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩১হাজার ২ শত ৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবুল হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৩ শত ৫৬ ভোট।
৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু বিজয়ী
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ফ্রিডম পার্টি ও কিছু অখ্যাত দল ও ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ভোটার বিহীন এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের বিজয়ী হন
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১০ হাজার ৭ শত ৩২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৭ শত ৫৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৮ শত ৮১ ভোট।
অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু বিজয়ী
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬ শত ৬৯ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪১ হাজার ১ শত ৪৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৩ শত ৫৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল। তিনি পান ৪২ হাজার ৯ শত ১২ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির জিএম কাদের
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ২শত ২৮ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩ শত ৬৫ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ১ শত ৪৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ১ শত ৩৯ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল বিজয়ী
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৪ হাজার ২ শত ৯৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৬১ হাজার ৬১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ দুলাল বিজয়ী হন। তিনি পান ৫৭ হাজার ৮ শত ৯১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের খোরশেদ আলম। মশাল প্রতীকে তিনি পান ১ হাজার ৪ শত ৩২ ভোট।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে লালমনির হাট-৩ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ১ শত ৯৭ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭ হাজার ২ শত ৯৫ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে বাংলাদেশের মোখছেদুল ইসলাম, মই প্রতীকে বাসদের আবু তৈয়ব মো. আজমুল হক পাটোয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৯শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আসাদুল হাবিব দুলু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ৩ শত ৯১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, লালমনির হাট-৩ আসনে প্রথম, দশম সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় এবং ১১ দিন মেয়াদের ৬ষ্ট ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, নবম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। একাদশ সংসদে এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। সাংগঠনিক অবস্থাও তেমন মজবুত নয়। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। দ্বাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মধ্য সরাসরি লডাই হবে। তবে জয় পরাজয় নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের ভূমিকার ওপর।
বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ