বিএনএ, রিপোর্ট: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়দের নেতৃত্বে গঠিত হতে যাচ্ছে এই দল, যা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। নতুন দলের আগমন ঘিরে রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণ চলছে।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ও লক্ষ্যজুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব আসা এই দলটি এক ব্যতিক্রমধর্মী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।বলা হচ্ছে, তাদের গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনি ইশতেহারে থাকবে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনিক কাঠামো তৈরির পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এই দল। প্রয়োজনে তারা নির্বাচনি জোটও গঠন করতে পারে বলে জানা গেছে।
নতুন দলের পেছনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক
বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের মতে, নতুন দল গঠনের পেছনে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতেই পারে। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সরকারি সহায়তায় নতুন দল গঠনের চেষ্টা হলে সেটি জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।”
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকি একই ধরনের মতামত দিয়ে বলেন, “ক্ষমতার ছত্রছায়ায় দল গঠন করা হলে জনগণ সেটিকে ভালোভাবে নেবে না। জনগণের মধ্য থেকে দল গঠিত হলেই সেটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাই। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একক ব্যক্তি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি থেকে সরে এসে বহুমুখী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।”
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন, যার পর ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন : রাজনৈতিক দল গঠন বা পদত্যাগের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি : নাহিদ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, “ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে এবং দেশব্যাপী সংগঠন বিস্তৃত করছে।”
এদিকে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে তিনি সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। তিনি বলেন, “সরকারে থেকে কোনো রাজনৈতিক দলে থাকব না।”
নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎবাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গত কয়েক দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বড় কোনো জাতীয় দল গঠিত হয়নি। যদিও বিভিন্ন সময় নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, তবে সেগুলো টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল আদৌ সফল হবে কিনা, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা মত প্রকাশ করছেন।
দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে কি না, সেটি নির্ভর করছে আসন্ন নির্বাচনে এই নতুন দলের ভূমিকার ওপর। এখন সবার নজর নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিকে।
আরও পড়ুন : পদত্যাগ করতে যাচ্ছে নাহিদ-আসিফ-মাহফুজ!
বিএনএনিউজ২৪,এসজিএন