বিএনএ, জয়পুরহাট: জয়পুরহাট সদর উপজেলার এক স্কুলছাত্র হত্যা মামলার ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে জয়পুরহাট অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আব্বাস উদ্দীন এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ছয়জন পলাতক রয়েছেন। বাকি পাঁচজন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে উপস্থিত আসামিরা হলেন- জয়পুরহাট শহরের শান্তিনগর এলাকার সারোয়ার হোসেন ওরফে সুমন, আরাফাত নগর এলাকার মশিউর রহমান এরশাদ ওরফে বাবু, দেওয়ানপাড়া মহল্লার মনোয়ার হোসেন ওরফে মুনসুর, দেওয়ানপাড়া মহল্লার মো. রানা এবং দেবিপুর কাজী পাড়া মহল্লার মো. শাহী।
পলাতক আসামিরা হলেন- শহরের দেওয়ানপাড়া মহল্লার বেদারুল ইসলাম বেদীন, টুটুল হোসেন, দেবিপুর এলাকার মো. সুজন, আব্দুর রহিম, জয়পুরহাট সদর উপজেলার তেঘরবিশা গ্রামের নজরুল ইসলাম এবং নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার ধরুইল গ্রামের মো. ডাবলু।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল এবং এপিপি উদয় চন্দ্র সিংহ মামলার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালতে হাজির থাকা পাঁচ আসামিকে পুলিশ পাহারায় জয়পুরহাট কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট শহরের প্রামাণিক পাড়ার ফজলুর রহমানের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন পৌর এলাকার পাঁচুরচক উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। ২০০২ সালের ২৮ জুন তার মাকে বলে বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার পরিবার জানতে পারে সদর উপজেলার ভিটি গ্রামে মোয়াজ্জেম গুরুতর জখম ও পায়ের রগ কাটা অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে রাতেই জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোয়াজ্জেম হোসেন মারা যায়। এ ঘটনায় শহরের প্রামাণিকপাড়ার নিহত মোয়াজ্জেম হোসেনের বাবা ফজলুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে জয়পুরহাট সদর থানায় ছেলে হত্যার মামলা করেন।
এ মামলার তদন্তভার পান জয়পুরহাট গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুর রহমান। তিনি মামলাটি তদন্ত করে ২০০৩ সালের ২৯ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, আসামি বেদারুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী রেশমা বেগমের সঙ্গে এক যুবকের পরকীয়ার সম্পর্ক। আর এ প্রেমে মোয়াজ্জেম ওই যুবককে সহযোগিতা করেছে। অন্য একটি মামলায় বেদারুল ইসলাম বেদীন পলাতক থাকাকালে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রেশমা বেগম স্বামী বেদীনকে তালাক দিয়ে ভালোবাসার যুবককে বিয়ে করে। এ ঘটনায় বেদারুল ক্ষিপ্ত হয়ে সে ও তার সহযোগীরা মিলে মোয়াজ্জেমকে শহরের চিত্রাপাড়া এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং মারপিট করে গুরুতর জখম করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোয়াজ্জেম মারা যায়। যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহববুর রহমান অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন।
বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী