বিএনএ, ঢাকা: মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ঐতিহাসিক বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্মানিত অতিথিসহ দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশ্ব ইজতেমা প্রান্তরে সমবেত হন। ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি)। এরই মধ্যে শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রস্তুত করছেন ইজতেমা ময়দান।
১ম পর্ব আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এবং ২য় পর্ব আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব রোববার আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। ইতিমধ্যে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অস্থায়ী সেতু তৈরি করেছেন।
বিশাল ময়দানে খিত্তা-ভিত্তিক মাইক বাঁধা এবং বাতি টানানোর জন্য বৈদ্যুতিক তার সংযোগের কাজও প্রায় সম্পন্ন। পাকা দালানে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেট ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওজু ও গোসলের হাউজগুলোও ভরে ওঠেছে পানিতে। এবার ছয় দিনের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়েরপন্থি মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করবেন। চার দিন বিরতির পর ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে। এ পর্বে অংশগ্রহণ করবেন সাদপন্থি মুসল্লিরা।
নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করা, মূল সড়কের কাছে তাবু না খাঁটানো এবং কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করতে দুই গ্রুপের মুরুব্বিদের নিয়ে রোববার ইজতেমা মাঠে সর্বশেষ সমন্বয় সভা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সভায় দুই গ্রুপই স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেছে যে, তারা কোনো বিশৃঙ্খলা বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হবেন না। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের ছয়টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তুরাগ তীরে বিদেশ থেকে আগতদের জন্য রয়েছে আলাদা থাকার ব্যবস্থা। বিদেশিদের ছাউনির পূর্ব পাশে তৈরি করা হয়েছে মূল বয়ানের মঞ্চ। এ মঞ্চ থেকেই উর্দুতে বয়ান করা এবং এ মঞ্চ থেকেই মূল উর্দু বয়ানের বাংলা অনুবাদ করা হয়।
তবে অন্যান্য ভাষাভাষীদের জন্য বয়ানের অনুবাদ করা হবে তাদের জন্য নির্ধারিত ছাউনিতে। প্রত্যেক ছাউনিতে মূল বয়ান অনুবাদ করার জন্য একজন করে দোভাষীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ইজতেমায়। চাইনিজ, জাপান, কুরিয়ান, ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, তুর্কি, মালাই ভাষাসহ প্রায় ২২টি ভাষায় এ বয়ানের অনুবাদ করা হয়।
১৯৪৬ সালে প্রথমবারের মতো কাকরাইল মসজিদে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে। ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তাবলিগ জামাতের এ বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগাড় গ্রামের কাছে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইজতেমায় বিদেশি কয়েকটি জামাতও অংশ নেয়। এখান থেকেই এর নাম হয় বিশ্ব ইজতেমা।
অবশেষে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর তুরাগ তীরবর্তী মাঠটি ইজতেমার জন্য বরাদ্দ করে দেন। তারপর থেকে অদ্যাবধি ১৬০ একর বিশাল ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ইজতেমা।
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম/ হাসনা/এইচমুন্নী