বিএনএ, কক্সবাজার : মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এ ছাড়া ছয় জনকে যাবজ্জ্বীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ।তারা হচ্ছেন এসআই নন্দদুলাল, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এএসআই সাগর দেব, সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. আইয়াজ, ও নিজাম উদ্দীন । এপিবিএনের তিন সদস্য সহ ৭ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।খালাস প্রাপ্তরা হলেন এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ,কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. লিটন মিয়া।
৩০০ পৃষ্ঠা রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।হত্যায় লিয়াকত ও নন্দদুলালের ভূমিকা প্রমাণিত।
এর আগে মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু হয় সোমবার(৩১জানুয়ারি)বেলা আড়াইটায়। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল রায় পড়া শুরু করেন। কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
এ সময় ১৫ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন : টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মো. লিটন মিয়া, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং এএসআই সাগর দেব, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী স্থানীয় তিন ব্যক্তি নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।
সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ২০২০ সালের ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
নির্মম ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হচ্ছে এ মামলার। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে মামলাটির পরবর্তী কাজ।প্রত্যক্ষদর্শী ৯ জন সহ মোট ৬৫ জন মামলায় সাক্ষ্য দেন।
সিনহা হত্যা মামলার রায়ের আগেই সবকিছুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই পুরো আদালত পাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত পাড়ার চারপাশে ও পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বিভাগের লোকজন কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে। টেকনাফ থানায় দায়ের করা এই দুই মামলায় নিহত সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাত ও রামু থানায় মাদক আইনে দায়ের করা মামলায় অন্য সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে আসামি করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।
ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘশুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১২ জানুয়ারি রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক।
আরও পড়ুন :
কে এই মেজর সিনহা
এক নজরে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড
সিনহা হত্যার নেপথ্যে প্রদীপের ইয়াবা বাণিজ্য
বিএনএ নিউজ ২৪, ওজি, এসজিএন
নিউজটি শেয়ার করতে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া বাটনে ক্লিক করুন