24 C
আবহাওয়া
৩:২৪ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেমন ছিলো ২০২২ সালের আদালত পাড়া

কেমন ছিলো ২০২২ সালের আদালত পাড়া


।। সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।।

জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নানান ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ হতে চলেছে ২০২২ সাল। এ বছর আইন-আদালতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার দায়ের, রায় ঘোষণা, গ্রেফতার, আসামি ছিনতাইসহ নানান ঘটনা ছিলো আলোচনায়।

জঙ্গি ছিনতাই, ফখরুল-আব্বাস-রিজভী গ্রেফতার, জামায়াতের আমির গ্রেফতার, হাজী সেলিম কারাগার, ডেসটিনির এমডির কারাদণ্ড, হাজতখানা থেকে মৃতুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি পলায়ন, টিপু-প্রীতি হত্যা, বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপালের কারাদণ্ড, এনু-রুপনের কারাদণ্ড, ডা. সাবরিনা চৌধুরীর রায়সহ সব মিলিয়ে বিদায়ী বছরের কিছু বিচারকার্য স্মৃতিতে লেগে থাকবে।

জঙ্গি ছিনতাই 

এই বছর আদালতপাড়ার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল আদালত প্রাঙ্গনে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত ২০ নভেম্বর অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। নিরাপত্তা নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন সদস্যকে প্রত্যাহারও করা হয়। এ ঘটনার পর আদালতপাড়ায় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। জঙ্গিদের বিশেষ নিরাপত্তায় আদালতে আনা নেয়া হয়।

ফখরুল-আব্বাস-রিজভী গ্রেফতার

জঙ্গি ছিনতাইয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৫০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদের জুয়েলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। রিজভী, অ্যানিসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ৮ ডিসেম্বর দিনগত রাত তিনটার দিকে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে পুলিশ। এরপর ৮ ডিসেম্বর দুপুরে তাদের গ্রেফতার দেখায় ডিবি পুলিশ। বিকেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জামায়াতের আমির গ্রেফতার

জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতে আমির শফিকুর রহমানের সম্পৃক্ততায় পাওয়ায় ১২ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। প্রথম দফায় ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২১ ডিসেম্বর তার আবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ। তিন দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

হাজী সেলিম কারাগারে

দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ড প্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের কারাগারে যাওয়ার ঘটনাটিও ছিলো আলোচিত। ২২ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন হাজি সেলিম। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ

গত ১৭ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরিদন সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ কয়েকটা অচল হয়ে পড়ে নিউমার্কেট এলাকা। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়। সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান নাহিদ হাসান নামে এক কুরিয়ারকর্মী।

এ ঘটনায় নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে। দুই মামলাতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর বিএনপি নেতা, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নেয়া হয়।

জুরাইনে পুলিশ বক্সে হামলা

গত ৭ জুন জুরাইন রেলগেট দিয়ে উল্টোপথে আসা একটি মোটরসাইকেলকে গতিরোধ করলে সার্জেন্ট আলী হোসেনের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়ান মোটরসাইকেল আরোহী সোহাগ উল ইসলাম রনি ও তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে লোকজন জড়ো হওয়ায় ওই এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে এসে তাদের সবাইকে মীমাংসার জন্য সড়কে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। এ সময় মোবাইলে ইয়াসিন জাহান নিশান বিষয়টি তার ভাই ইয়াসির আরাফাতকে জানান। তিনি লোকজন নিয়ে এসে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন। এরপর পুলিশ বক্স ভেঙে তারা বের হয়ে আসেন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। আদালতে আইনজীবীসহ অপর আসামিদের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আর এই ঘটনায় আইনজীবীরা এক হয়ে তার পক্ষে দাঁড়ান। তারপরও আদালত আইনজীবীর রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরেও আনেন আইনজীবীরা।

হাজতখানা থেকে মৃতুদণ্ড প্রাপ্ত আসামির পলায়ন

ঢাকার জেলা ও দায়রা আদালতের হাজতখানা থেকে ২৮ এপ্রিল কলেজ ছাত্র মুনসের আলী ওরফে মুন্না হত্যা মামলার মৃত্যু দণ্ড প্রাপ্ত কপুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।

টিপু-প্রীতি হত্যা 

গত ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনী কাঁচা বাজার সংলগ্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে শাজাহানপুর আমতলা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী প্রীতি। টিপুর গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার ও রিমান্ড নিয়ে আদালত প্রাঙ্গন ছিল সরগরম।

ডেসটিনির রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা মানিলন্ডারিং আইনের এক মামলায় প্রতিষ্ঠানটির এমডি রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
গত ১২ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। একই সাথে ৪৬ আসামিকে মোট ২৩শ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।রায়ে রফিকুল আমীনকে ১২ বছর কারাদণ্ড, ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তাকে আর ৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বছরের শুরুর দিকে বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজনস পার্থ গোপালের কারাদণ্ড ৮ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে এই কারাদণ্ড নিয়ে বেশ আলোচনায় আসে আদালত পাড়া। গত ৯ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালত বরখাস্ত হওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিককে দুদকের করা মামলায় পৃথক দুই ধারায় ৮ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এনু-রুপনের ৭ বছরের কারাদণ্ড

রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপম ভুঁইয়া রূপনসহ ১১ জনের ৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ২৫ এপ্রিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেনের আদালত এই রায় ঘোষণা করবেন। পাশাপাশি আরও ৪ কোটি টাকার অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

জেকেজি হেলথ কেয়ারের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা চৌধুরীর ১১ কারাদণ্ড

গত ১৯ জুলাই জেকেজি হেলথ কেয়ারের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা ও আরিফুল চৌধুরীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা ও জাল সনদ দেওয়ার অভিযোগের মামলার পৃথক ৩ ধারায় ১১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এই রায় ঘোষণা করা হয়।

বিএনএ নিউজ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ